আজ: বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার |

kidarkar

নির্দেশিকা প্রকাশ

ষষ্ঠ-নবমে ৭০ নম্বরের বার্ষিক পরীক্ষা, থাকছে শিখনকালীন মূল্যায়নও

মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিন ঘণ্টার বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতে ৭০ নম্বরের প্রশ্নপত্র থাকবে। বাকি ৩০ নম্বর দেওয়া হবে শিক্ষার্থীর শিখনকালীন মূল্যায়নের ভিত্তিতে। নতুন কারিকুলামের বইয়ের ওপর এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে।

‘২০২৪ সালের শিখনকালীন মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশিকায়’ এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ চারটি শ্রেণির ৫০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এ নির্দেশনা ও সিলেবাসের অপেক্ষায় ছিলেন।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) এ নির্দেশিকা জারি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। একই সঙ্গে চারটি শ্রেণির পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসও প্রকাশ করা হয়েছে। এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা এ সিলেবাস ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

নির্দেশিকায় এনসিটিবি জানায়, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বার্ষিক পরীক্ষা দুটি ভাগে অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষা জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ এর আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব তত্ত্বাবধানে শিক্ষকদের দ্বারা শিখনকালীন মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রদত্ত প্রশ্নপত্রের নমুনা অনুসরণ করে বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করবেন। তবে কোনোক্রমেই নমুনা প্রশ্নপত্র হুবহু ব্যবহার করা যাবে না। প্রণীত প্রশ্নের সাহায্যে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করবেন।

যেভাবে বার্ষিক মূল্যায়ন
প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন কার্যক্রমের মোট নম্বর হবে ১০০। এর মধ্যে শিখনকালীন মূল্যায়নের গুরুত্ব হবে ৩০ শতাংশ ও পরীক্ষার গুরুত্ব হবে ৭০ শতাংশ। বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক জিপি বা গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

শিখনকালীন মূল্যায়ন যেভাবে
প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকে নির্দেশিত একক কাজ, জোড়ায় কাজ, পোস্টার প্রেজেন্টেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম শিখনকালীন মূল্যায়নের ‘মূল্যায়ন আইটেম’ হিসেবে বিবেচিত হবে। শিখনকালীন মূল্যায়ন পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির আওতাধীন শিখনকালীন মূল্যায়নের যেসব কার্যক্রম এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং যেগুলো সামনে সম্পন্ন হবে, সেগুলোর রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের যাবতীয় কার্যক্রম বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর আগে সম্পন্ন করতে হবে।

বার্ষিক পরীক্ষা হবে যেভাবে
বার্ষিক পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত পরীক্ষার মোট সময় হবে তিন ঘণ্টা। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের নির্দেশিকা, প্রশ্নের কাঠামো, মানবণ্টন ‘বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনায়’ বিস্তারিত দেওয়া আছে। বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনায় প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র দেওয়া আছে। লিখিত পরীক্ষার উত্তর লেখার জন্য পূর্বের ন্যায় বিদ্যালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় খাতা সরবরাহ করতে হবে।

গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ

শ্রেণি উত্তরণের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ফলাফল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ের মোট নম্বর হবে ১০০। এ ১০০ নম্বরের মধ্যে ধারাবাহিক বা শিখনকালীন মূল্যায়নের গুরুত্ব হবে ৩০ শতাংশ এবং লিখিত বার্ষিক পরীক্ষার গুরুত্ব হবে ৭০ শতাংশ।

যেহেতু প্রত্যেক বিষয়ে ধারাবাহিক বা শিখনকালীন মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ নম্বর ৩০ এবং লিখিত পরীক্ষায় বরাদ্দ নম্বর ১০০, সেহেতু একজন শিক্ষার্থীর একটি বিষয়ের বার্ষিক ফলাফল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ওই বিষয়ের ধারাবাহিক বা শিখনকালীন মূল্যায়নে তার প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে লিখিত বার্ষিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ৭০ শতাংশ যোগ করে ওই বিষয়ের বার্ষিক ফলাফল বা গ্রেড নির্ণয় করতে হবে।

গ্রেডিং নির্ণয়
কোনো বিষয়ে মূল্যায়নে মোট ৮০ থেকে ১০০ নম্বর পেলে A+ বা ৫ পয়েন্ট, ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর পেলে A বা ৪ পয়েন্ট, ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর পেলে A- বা ৩ দশমিক ৫ পয়েন্ট, ৫০ থেকে ৫৯ পেলে B বা ৩ পয়েন্ট, ৪০ থেকে ৪৯ পেলে C বা ২ পয়েন্ট, ৩৩ থেকে ৩৯ পেলে D বা ১ পয়েন্ট ও ০০ থেকে ৩২ পেলে F বা ০ পয়েন্ট পাবেন শিক্ষার্থীরা।

যেভাবে পরের শ্রেণিতে প্রমোশন

একটি বিষয়ে সর্বনিম্ন D গ্রেড পেলে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ বলে বিবেচনা করা হবে। তিন বা ততোধিক বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী D গ্রেড পেলে সে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না।

তবে বিষয় শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানপ্রধান বিশেষ বিবেচনায় তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের সুযোগ দিতে পারেন। বিশেষ বিবেচনার বিষয়টি শুধু ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রযোজ্য হবে।

জানা গেছে, নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে পরীক্ষা ছিল না। শিখনকালীন মূল্যায়ন ও বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের ভিত্তিকে শিক্ষার্থীদের এক শ্রেণিতে আরেক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার নিয়ম ছিল। এ নিয়ে শুরু থেকে অনেক অভিভাবক প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। যে কারিকুলামই হোক না কেন, তাতে পরীক্ষা রাখার দাবি ছিল তাদের।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিদ্যামন কারিকুলাম বাতিল করে আগের কারিকুলামে (সৃজনশীল) ফেরার কথা জানান।

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এজন্য আগের সৃজনশীল কারিকুলামে ফেরা হবে। তবে চলতি বছরের যেহেতু আট মাস পেরিয়ে গেছে, সেজন্য এ বছর নতুন কারিকুলামের বইয়ের ওপর বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আগামী বছর থেকে পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন করে সৃজনশীল কাঠামোতে ফেরা হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ গত বছর থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। এ বছর প্রাথমিকের তিনটি এবং মাধ্যমিকের চারটি শ্রেণিতে নতুন এ কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। এরমধ্যে ষষ্ঠ থেকে নবমে ৫০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এ কারিকুলামে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে অংশও নিয়েছিল।

তবে কয়েকটি পরীক্ষা হওয়ার পরই কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। সরকার পতনের পর কারিকুলামই বাতিলের সিদ্ধান্ত আসায় সেই মূল্যায়ন আর শেষ না করে বাতিল ঘোষণা দেওয়া হয়।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.