আজ: সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ইং, ১২ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার |

kidarkar

বকেয়ায় আটকে আছে এলএনজি আমদানি, বিদ্যুতের ভোগান্তি চরমে

শেয়ারবাজার ডেস্ক : ৬০ কোটি ডলারেরও বেশি বকেয়া পরিশোধ না করায় আটকে আছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি। ফলে গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় ঘাটতিতে সারা দেশে ব্যাপক লোডশেডিং চলছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বকেয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানির বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল ৬৩৩ মিলিয়ন ডলার। ১০ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি কাতার এনার্জিকে ২৫.৬১ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করেছে সরকার।এতে বকেয়া কমে ৬০৭.৩৫ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বাকি ৬০৭.৩৫ মিলিয়ন ডলার তথা ৬০ কোটিরও বেশি ডলার দ্রুত পরিশোধের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছে রপ্তানিকারক দেশগুলো।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ ডিজেল, পেট্রল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও এলএনজি। দেশে ব্যবহৃত এসব জ্বালানির শতকরা ৬০ ভাগই আমদানি করতে হয়। এখন জ্বালানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।এতে কয়েক দিন ধরেই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন কমেছে।

দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার ৫০০ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে কমপক্ষে ২ হাজার মেগাওয়াট। ফলে ব্যাপক মাত্রায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে থাকে। এর আগে আইটিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে কাতার এনার্জির দুটি বিল গত মে ও জুলাই মাসে পরিশোধ করেছিল জ্বালানি বিভাগ। মে মাসে আইটিএফসির সেই ঋণের একটি কিস্তিও বকেয়া পড়ে।

ডলার-সংকটের কারণে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময় এলএনজির পরিশোধ করা যায়নি। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন সচল রাখতে প্রয়োজনীয় জ্বালানির নিশ্চয়তা এবং বকেয়া অর্থ চাইছে। কিন্তু সরকারের কাছে ডলারের ঘাটতি থাকায় তা মেটানো যাচ্ছে না। এখন জ্বালানিসংকট তীব্র হওয়ার এটা বড় কারণ। আট মাস ধরেই এ পরিস্থিতি চলতে থাকায় মজুত জ্বালানিও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। আদানি গ্রুপ বকেয়া শোধের তাগিদ দিয়ে চিঠি দিয়েছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মতে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানি শেভরনের মোট সাতটি বিল বকেয়া পড়েছে। শেভরনের সরবরাহ করা গ্যাসের বকেয়া জমেছে ২২৪ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। ১০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটিকে ৩ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত বুধবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাকি অর্থ পরিশোধ করার অনুরোধ করেছেন শেভরনের কর্মকর্তারা।

চুক্তির বাইরে দ্রুত সরবরাহ পেতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া, গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড ও এক্সেলারেট এনার্জির মাধ্যমে গ্যাস কিনেছে জ্বালানি বিভাগ। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাসের দামের ৮৭ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে।

জানা গেছে, বকেয়ার অঙ্ক বেশি থাকায় ২ ও ৯ সেপ্টেম্বর দুই কার্গো এলএনজি খালাস না করে সরবরাহকারীরা ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগপর্যন্ত নিয়েছিল। পরে জ্বালানি বিভাগ জরুরিভাবে অনুরোধ করে তা খালাসের ব্যবস্থা করে।

চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সংকট কাটাতে দ্রুত জ্বালানি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর কিছু আসবে দীর্ঘমেয়াদি প্যাকেজে। আর কিছু আসবে তাৎক্ষণিক কেনার স্পট মার্কেট থেকে। উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে জ্বালানি আসা শুরু হবে। এই জ্বালানি এলেই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে কিছু পেমেন্ট হয়েছে। এটি চলমান থাকবে। তবে এই বকেয়া শুধু জ্বালানির ক্ষেত্রেই নয়। সারসহ আরও নানা রকম বকেয়া আছে। এর মধ্যেই আমরা যতটা পারি সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.