পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসইর নব গঠিত পর্ষদের সাথে বিএসইসির বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদুল মাকসুদ ও কমিশনারদের সাথে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম-এর নেতৃত্বে নব গঠিত পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ (১৬ অক্টোবর) ডিএসইর বোর্ডরুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠককে উপস্থিত ছিলেন বিএইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদুল মাকসুদ, কমিশনার মুঃ মোহসিন চৌধুরী, মোঃ আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ এবং নির্বাহী পরিচালক ও ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বৈঠকের শুরুতেই ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই মিটিং ডিএসই বোর্ড এবং বিএসইসি’র কমিশনারবৃন্দ উভয় পক্ষের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উদ্যোগ। এতে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক ইন্টাররেকশন বৃদ্ধি পাবে। ৩ অক্টোবর আমাদের ডিএসই’র এই নবিগঠিত পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে। আমরা সকলের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কাজ করবো। স্টক এক্সচেঞ্জ হলো পুঁজিবাজারের মূল চালিকা শক্তি। ডিএসই তার অভ্যন্তরীণ কাঠামো আরও শক্তিশালী করবে যাতে তারা পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ডিএসই পুঁজিবাজারের প্রাথমিক রেগুলেটর। ডিএসইকে মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজ, পাবলিক লিস্টেট কোম্পানি, বিনিয়োগকারী, মিডিয়াসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে একটি লিংক তৈরি করতে হবে। আমাদের সামনের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবেলা করতে আমরা স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সময়ের সাথেসাথে তা বাস্তবায়ণ করতে হবে। ডিএসই প্রধান রেগুলেটরের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার তৈরি করতে বদ্ধপরিকর। আমাদেরকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং বিদ্যমান কিছু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। একইসাথে আমাদের ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কিছু সমস্যা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বের করতে হবে। গঠনমূলক সংস্কারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
পরে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে ডিএসইর ইতিহাস, পরিচালনাগত আইন, বিধি ও প্রবিধান, কোম্পানির অবস্থা, শেয়ার মূলধন এবং ডিএসইর শেয়ারহোল্ডিং প্যাটার্ন; বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কাঠামো; ডিএসই’র ডিমিউচুয়ালাইজেশন ও এর উদ্দেশ্য; ডিএসই ভূমিকা, দায়িত্ব, পরিচালনা পর্ষদ ও বোর্ড কমিটি; ডিএসই’র পণ্য এবং ট্রেডিং বোর্ড; পার্শবর্তী এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন; ২০১১-২০২৪ সাল পর্যন্ত আইপিও স্ট্যাটাস এবং মিউচুয়াল ফান্ড, টার্নওভার ভেলোসিটি অনুপাত, আর্থিক অবস্থা, ডিএসই’র আইসিটি অবকাঠামো, ডেটা সেন্টার ও আইসিটি চ্যালেঞ্জ সমূহ; ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের উদ্দেশ্য; কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের থেকে মূল্য সংযোজন অফার; ডিএসই’র আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংযুক্তি; পণ্য, বাজার এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ডিএসইর ভবিষ্যত পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
পরিশেষে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদুল মাকসুদ বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে স্বপ্ন দেখছি বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। আমরা আগামীর যে বাংলাদেশ চাই, সেখানে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের মূল উৎস হওয়া উচিত পুঁজিবাজার। এর জন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। পুঁজিবাজারের সকল সমস্যা একদিনে সমাধান করা সম্ভব নয়, এজন্য সময়ের প্রয়োজন। আমাদের বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সংস্কার। প্রধান উপদেষ্টা থেকে সকলেই বলেছেন যে, প্রথম ও প্রধান বিষয় হচ্ছে সংস্কার। এজন্য আমরা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বসছি এবং মতামত নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা সকল কিছুর কেন্দ্রবিন্দু হবে। এছাড়াও আমাদের তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। একইভাবে টাস্কফোর্সও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। পলিসিগত বিষয় ছাড়া আমরা ডিএসইকে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। বিএসইসি’র সাথে ডিএসই’র সম্পর্ক হবে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত।
তিনি আরও বলেন, আমরা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এবং সমস্ত কিছু একতরফাভাবে না করে, সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করতে চাই। বিএসইসি আশা করে ডিএসই নতুন বোর্ডের লক্ষ্য হবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা। আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ হবে সবাইকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা এবং কমপ্লায়েন্স এবং গভান্যান্স বৃদ্ধি করা। আর এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের প্রতি সকলের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। সব সময় সঠিক পথে থাকলে এর ফলাফল অবশ্যই পাওয়া যাবে।
বৈঠকে উপস্থিত বিএসইসি ও ডিএসই’র কর্মকর্তাগণ পুঁজিবাজার উন্নয়নে একসাথে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সবশেষে বিএসইসির চেয়ারম্যান, কমিশনার ও অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ ডিএসইর ডেটা সেন্টার, ডিবিএ, সিডিবিএল, সিসিবিএল-এর অফিস এবং ডিএসই লাউঞ্জসহ ডিএসই টাওয়ার পরিদর্শন করেন৷