৬ মাসে ব্যাংকগুলোর সিএসআর কমেছে ১২ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে শিক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংরক্ষণ খাতে দেশের ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিশে সংরক্ষণ খাতে ব্যাংকগুলোর খরচ হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ এবং শিক্ষা খাতে কমেছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট সিএসআর ব্যয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে এবং ২০ শতাংশ পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ব্যয় করতে হবে। বাকি ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে আয়-উৎসারী কাজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং অন্যান্য খাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংরক্ষণ খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় আগের বছরের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমেছে। ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে এই খাতে সিএসআর ব্যয় ছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারি-জুনে এই খাতের ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণ খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় ৫০ শতাংশ কমেছে।
তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে শিক্ষা খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় ছিল ৭২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারী-জুন সময়ে শিক্ষা খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় হয়েছে ৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে শিক্ষা খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় কমেছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্যান্য খাতেও ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় কমেছে। গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে অন্যান্য খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় ছিল ১৯৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্যান্য খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় হয়েছে ১৬৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্যান্য খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় কমেছে ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
তবে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় বেশি কমেনি। তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় ছিল ৭২ কোটি ৩ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় হয়েছে ৭১ কোটি ৯৮ শতাংশ। সেই চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় কেমেছে দশমিক ৪৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, সব খাত মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকগুলোর মোট সিএসআর ব্যয় ছিল ৩৫৩ কোটি শূন্য ৭ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারী-জুন) ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় হয়েছে ৩০৯ কোটি ২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় কমেছে ৪৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, বা ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৫টি ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর বেসরকারি খাতের ৪৩টি ব্যাংকের মধ্যে ৪০টি ব্যাংক ব্যয় করেছে ২৯৯ কোটি ১৬ টাকা। ৯টি বিদেশি ব্যাংকের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান বাদে বাকী ৮টি ব্যাংক ব্যয় করেছে ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আলোচ্য সময়ে সিএসআর খাতে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয়ে করেছে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে স্বাস্থ্য খাতে ১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, শিক্ষায় ৫৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ ব্যয় করেছে।