নারী শ্রমশক্তির ৭৪ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত, জমির মালিকানায় ৫ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মোট নারী শ্রমশক্তির ৭৪ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত আছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমির কার্যকর মালিকানা রয়েছে মাত্র ৪-৫ শতাংশ নারীর। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) আয়োজিত ‘সরকারি কৃষিসেবা ও ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে গ্রামীণ নারী কৃষকের অন্তর্ভুক্তি এবং বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োজিত আছে শস্য কৃষির ক্ষেত্রে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে, মোট নারী শ্রমশক্তির ৭৪ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত। শস্য উৎপাদনসংক্রান্ত ২১ ধরনের কাজের মধ্যে ১৭টিতে নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ভূমি অধিকারে তারা পিছিয়ে আছেন। নারীদের এ পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে ভূমি ক্রয়ে আর্থিক অসংগতি, পিতৃতান্ত্রিকতা, ভূমি স্বাক্ষরতার অভাব ও দুর্নীতি। এছাড়া প্রচলিত বৈষম্যমূলক আইন ও নীতিমালা ভূমির মালিকনায় নারীর প্রবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমাদের নারী মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি বড় কার্যক্রমভিত্তিক জায়গা আছে। সেখানে আমি ত্রুটি পেয়েছি। আমরা এসব জায়গায় কাজ করছি।’
রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, ‘নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজমান। সংসদে যে সর্বনিম্ন মজুরির হার নির্ধারণ করা হয়েছে তা আদৌ মানা হচ্ছে কিনা তা আমরা জানি না।’
দেশের নারীরা সাধারণত তিনটি উপায়ে ভূমির অধিকার পেয়ে থাকে—উত্তরাধিকার, খাসজমি বিতরণ ও ভূমি বাজার (ক্রয় ও লিজ গ্রহণ)। এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবির বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এক-চতুর্থাংশ ভূমিহীন পরিবার নারীপ্রধান। অনেকের স্বামী বেঁচে নেই। তারা খাসজমির মালিক হতে পারেন না। কারণ খাসজমি পেতে হলে সক্ষম পুত্রসন্তান থাকা লাগে। এটা নিয়ে প্রতিবার আলোচনা করলেও তা তুলে দেয়া যায়নি।’
গতকাল আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে ওই সেমিনারটি আয়োজন করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির উপনির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি, প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান ড. রেজিয়া খাতুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রঞ্জন সাহা পার্থ, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদাসহ অনেকে।