এস.আলম গ্রুপের কোনো ঋণ আল- আরাফায় নেই: এআইবিএল চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে দেশে ব্যাংক খাতে ব্যাপক অরাজকতা চালিয়েছে এস.আলম গ্রুপ। একের পর এক এস আলম গ্রুপ ও তার সহযোগীরা ৭টি ব্যাংক দখল করে নেয়। নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে তারল্য সংকটে রয়েছে ৬টি ব্যাংক। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক (এআইবিএল), এখন পর্যন্ত এই ব্যাংকের বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির তথ্য পাওয়া যায় নাই।
এআইবিএলে এস আলম গ্রুপের মাত্র ৬-৭ শতাংশ মালিকানা থাকায় ব্যাংকটিতে তারা আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। অন্যদিকে বাকী ৬ ব্যাংকে এস আলমের ঋণ থাকলেও এআইবিএলে কোন ঋণ কেলেংকারি নেই।
সম্প্রতি এআইবিএলের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ার একটি সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাতকারে এ তথ্য জানান।
খাজা শাহরিয়ার বলেন. ব্যাংকের সব শেয়ারের মালিকানা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে এস আলম গ্রুপ কিংবা ওই পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এআইবিএলের শেয়ার মাত্র ৬-৭ শতাংশ। এ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করার মতো শেয়ারের মালিকানাও এস আলম গ্রুপের ছিল না।
এছাড়া এস আলম গ্রুপের কোনো ঋণ এ ব্যাংকে নেই। অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় এক্ষেত্রে আল-আরাফাহ্ ব্যতিক্রম। গ্রুপটির কোনো ঋণ না থাকাটি আমাদের জন্য স্বস্তির। অন্য ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে ঋণ বের করে নেয়ার যেসব ঘটনা আমরা শুনছি, সে ধরনের কোনো বিষয় এ ব্যাংকে ঘটেনি।
এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শরিয়াহভিত্তিক বাকী ছয় ব্যাংক ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, এস আলম গ্রুপ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এসব ব্যাংক থেকে, যার পুরোটাই খেলাপি হওয়ার পথে। এদিকে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়ায় বড় রকমের তারল্য সংকটে পড়েছে এসব ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে এআইবিএলের সচিব মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়া গণমাধ্যমে বলেন, আল-আরাফাহ ব্যাংক সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। শরীয়াহভিত্তিক অন্য ব্যাংকগুলো থেকে এস.আলম গ্রুপ টাকা পাচার করলেও আল-আরাফা ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, আমাদের মোট পরিচালকের মধ্যে এস.আলমের লোক ছিল মাত্র একজন।
আগামীতে এআইবিএল অনেক ভালো ব্যবসা করতে পারবে বলে জানান নিজাম উদ্দিন। ব্যাংকের ভালো ঋণ, খারাপ ঋণ কারেকশন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা মার্কেটিং আরো কিভাবে বাড়াতে পারি সেটা নিয়ে কাজ করছি।
আইনে বলা হয়েছে, একটি পরিবারের তিনজনের বেশি সদস্য ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না। এছাড়া একটি পরিবার ও তাদের প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবে না। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়াও সাইফুল আলমের পরিবারের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানগুলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২২ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৮ শতাংশ ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল। এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও নর্দার্ন ইনস্যুরেন্সে পাঁচ শতাংশ করে এবং আভিভা ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ব্যাংকে ৭০ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে তাদের। তবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডিং তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও এস আলম গ্রুপের ওয়েবসাইটে ব্যাংকটির মালিকানা দাবি করা হয়েছে।
এআইবিএলের আর্থিক চিত্র
১৯৯৫ সালে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সারা দেশে এ ব্যাংকের ২২৬টি শাখা ও ৭৭টি উপশাখা রয়েছে। ব্যাংকটিতে জমা আছে গ্রাহকের ৪৯ হাজার ৫১৩ কোটি টাকার আমানত। এ ব্যাংকের ৪৬ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ স্থিতিও রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আল-আরাফাহ্ ৭৫৭ কোটি টাকার মুনাফা পেয়েছে। এ ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৩৭ লাখ, এর মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার বিনিয়োগ গ্রহিতা।
দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সেপ্টেম্বর পর্যন্তে এ ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। একই সময়ে ২৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ার রয়েছ ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ৯১ হাজার ৭১৩টি। এর মধ্যে ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ১৫.১১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫.৫৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ২১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৯.১১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।