আজ: রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪ইং, ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার |

kidarkar

বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে সব ধরনের পণ্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে বিক্রি হলেও তামাকজাত দ্রব্য বিশেষ করে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে। দশকের পর দশক এভাবে অবৈধ ব্যবসা করে ভোক্তার অধিকার হরণ করে আসছে তামাক কোম্পানিগুলো। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক নীতি না মেনে অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

এতে বলা হয়, গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন, এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে প্রমাণ হয়েছে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো প্যাকেটে মুদ্রিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করছে। তামাক কোম্পনির প্রতিনিধিরা খুচরা বিক্রেতাদের কোনো ধরনের ট্রেডমার্জিন না দিয়ে সিগারেট বাজারজাত করে এবং ভোক্তার কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করতে খুচরা বিক্রেতাদের প্ররোচিত করে। বাড়তি খুচরা বিক্রয়মূল্যও তামাক কোম্পনির প্রতিনিধিরাই নির্ধারণ করে দেয়। এভাবে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে তারা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ভঙ্গ করছে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

বিভিন্ন গবেষণা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট বিক্রি না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ। চলতি বছরের বাজেটে সিগারেটের চার স্তরে মূল্যবৃদ্ধি ও করহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশে সিগারেট সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় খুচরা সলাকায়। এজন্য সরকার সিগারেটের মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করেছে যাতে এক শলাকা সিগারেটের মূল্যে খুচরা পয়সা না থাকে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও তামাক কোম্পানিগুলো এক শলাকা সিগারেটের মূল্যে ভাঙতি পয়সা রেখে মূল্য নির্ধারণ করেছে, ভাঙতি পয়সার অংশটুকু বাড়িয়ে নিয়ে পূর্ণ টাকায় বিক্রি করছে। এর মাধ্যমে সরকারের নীতিকে আরও একবার লঙ্ঘন করে রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি ভোক্তাদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে।

জাতীয় বাজেটে সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সিগারেটের প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য মুদ্রণ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের অধিক মূল্যে কোনো পর্যায়েই সিগারেট বিক্রি না করা নিশ্চিত করতে আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তারপরও তামাক কোম্পানিগুলোর ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর গবেষণায় উঠে এসেছে, কোম্পানিগুলো সিগারেটের প্যাকেটে একটি মূল্য (এসআরপি) লেখে, কিন্তু খুচরা বিক্রির সময় ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করে। এভাবে তারা বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

আবার জাতীয় বাজেটে সরকার যখন সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করে তখন তারা আগের অর্থবছরের মূল্য লিখিত (আগের অর্থবছরের মূল্যে কর পরিশোধিত) সিগারেট নতুন বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করে। এভাবে তারা আরও একবার ভোক্তা অধিকার হরণ করে এবং রাজস্ব ফাঁকি দেয়।

তামাক কোম্পানিগুলো দেশের আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করবে বলেই প্রত্যাশা করে ক্যাব। কিন্তু দশকের পর দশক এভাবে আইন ভেঙে অবৈধ ব্যবসা করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি এবং ভোক্তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এসব তামাক কোম্পানির বিগত দিনে ফাঁকি দেওয়া অর্থ ফেরত নেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত আইনের বাস্তবায়ন করা জরুরি। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.