আজ: সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ইং, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৭ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ট্রাম্পের জয়: ‌যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রফতানি ‘হুমকিতে’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন মুলুকে নির্বাচন আর দুশ্চিন্তায় ঘামছেন চীনে বিনিয়োগকারী ও চীনা ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যসংশ্লিষ্টদের মধ্যে এ উদ্বেগ অনেকটা বেশি। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যার ব্যাপক পরিচিতি বেইজিংয়ের কঠোর সমালোচক হিসেবে।

হোয়াইট হাউজে ঢুকতে পারলেই চীনা পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথে ট্যারিফের দেয়াল তোলার আগাম ঘোষণা এরই মধ্যে দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। তবে তার বদলে কমলা হ্যারিস জিতলেও তা দেশটির জন্য বেশি স্বস্তিকর হতো না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে চীন থেকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা আরও বেগবান হতে পারে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের মেয়াদে। হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে এমনটাই।

হোয়াইট হাউজের পরবর্তী প্রশাসনের অধীনে চীনা পণ্যের ওপর থাকা বর্তমান ট্যারিফ বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ভিয়েতনামে কর্মরত বিজনেস কনসালটেন্ট কাইল ফ্রিম্যান এমনটাই মনে করছেন। তিনি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘এটা না হলে, তা হবে ব্যতিক্রম।’

 

ফ্রিম্যান আগে চীনে কাজ করলেও বছর দুয়েক আগে ভিয়েতনামের হো চি মিন নগরীতে চলে আসেন। শুধু ফ্রিম্যানের প্রতিষ্ঠানই নয়, এ রকম পশ্চিমা অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও নিজেদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করছে।

মূলত চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কাই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সব ডিম এক ঝুড়িতে না রেখে যেসব পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান চীনে ব্যবসা করতেন, তারা এখন তাদের সাপ্লাই চেন অটুট রাখতে চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করছে।

আর তাদের এ পদক্ষেপ অমূলক কিংবা অযৌক্তিক নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চীনের বিরুদ্ধে ট্যারিফ আরোপ করতে পারলে ডোনাল্ড ট্রাম্প কতটা খুশি হবেন, তা বোঝা যায় নির্বাচনী প্রচারণায় করা তার উক্তিতে।

তিনি বলেছিলেন, ‌‘ডিকশনারির সবচেয়ে সুন্দর শব্দ হলো ট্যারিফ।’ পাশাপাশি নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব চীনা পণ্যের ওপর গণহারে ৬০ শতাংশ ট্যারিফ আরোপেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।

এ ব্যাপারে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের শিক্ষক ডেভিড স্টেইনবার্গ বলেন, আগের মেয়াদে করা প্রেসিডেন্সি থেকে বর্তমান মেয়াদে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি আরও আগ্রাসী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া, চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এ আগ্রাসী বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে খুব বেশি বাধার সম্মুখীন হবে না বলেও মনে করা হচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যেও বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি এ মুহূর্তে অনেকটাই জনপ্রিয়। তাদের মতে, সস্তা বিদেশি পণ্যে মার্কিন বাজার সয়লাব হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। পাশাপাশি তাদের আয়েও এর প্রভাব পড়ছে। আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শ্রমজীবীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এ মনোভাবের যে প্রভাব, তার সবচে বড় উদাহরণ হলো বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তার আগের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে আরোপিত বিভিন্ন ট্যারিফের প্রায় বেশিরভাগই বহাল রেখেছেন তিনি।

এদিকে, সম্ভাব্য এ ট্যারিফযুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন সরকারও। যদিও তারা বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তেমন প্রতিক্রিয়া এখনও দেখায়নি। তবে ভেতরে ভেতরে এ ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর উপায় নিয়ে কাজ করছে দেশটি।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন নির্বাচনে চীনের বিরুদ্ধে ট্যারিফ ইস্যুটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র তখন বলেন, ‘মার্কিন নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমরা এ নির্বাচনে চীনকে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.