জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গরিব দেশগুলো বছরে পাবে ৩০ হাজার কোটি ডলার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবং এর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোকে বছরে রেকর্ড ৩০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে ধনী দেশগুলো। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলমান জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ-২৯ এ দেশগুলো এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গরিব দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর তরফ থেকে কী পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে সে বিষয়টি নিয়ে সম্মেলনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। টানা ৩৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল এই আলোচনা। অবশেষে ভেঙে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ধনী দেশগুলো এই পরিমাণ অর্থ দিতে সম্মত হয়। এই বিষয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক প্রধান সাইমন স্টিয়েল বলেন, ‘এটি কঠিন পথ ছিল, তবে আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছি।’
তবে বাকুতে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা গত বছরের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে গৃহীত চুক্তির ওপর কোনো অগ্রগতি আনতে পারেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো গতকাল শনিবার দুপুরে আলোচনার মাঝপথে ক্ষুব্ধ হয়ে সম্মেলন ত্যাগ করে।
এই বিষয়ে ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জোটের প্রধান সেড্রিক শুসটার বলেন, ‘আমি এক বিন্দু বাড়িয়ে বলছি না, আমাদের দ্বীপগুলো ডুবে যাচ্ছে! এমন একটি দুর্বল চুক্তি নিয়ে আমরা কীভাবে আমাদের দেশের নারী-পুরুষ ও শিশুদের কাছে ফিরব?’ তবে স্থানীয় সময় আজ রোববার ভোর ৩টায় কিছু পরিবর্তনের পর চুক্তিটি গৃহীত হয়। চুক্তির পরে করতালির সঙ্গে উদ্যাপন হলেও ভারতের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ সম্মেলনের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়।
বরাদ্দ করা অর্থকে অপ্রতুল মন্তব্য করে ভারতের প্রতিনিধি লীলা নন্দন বলেন, ‘আমরা এটি মেনে নিতে পারি না…প্রস্তাবিত লক্ষ্য আমাদের জন্য কোনো সমস্যার সমাধান করবে না। এটি আমাদের দেশের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সহায়ক নয়।’
এদিকে, সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসের বিষয়ে চুক্তিতে উল্লিখিত ভাষাকে দুর্বল বলে অভিযোগ তোলে। এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০—যা ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হবে—পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়েছে।
এই অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির এই বিষয়টিই ফুটিয়ে তোলে যে, গরিব দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তুলনামূলকভাবে কম দায়ী হলেও এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার। নতুন প্রতিশ্রুত অর্থ উন্নত দেশগুলোর সরকারি অনুদান, ব্যাংক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে আসবে। এটি দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে সহায়তা করবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে বরাদ্দ অর্থ তিনগুণ করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে সম্মেলনে। ঐতিহাসিকভাবে, জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের মাত্র ৪০ শতাংশ প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যবহৃত হয়েছে। ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ২০৩৫ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার ডলার প্রয়োজন বলে সম্মত হয়েছে দেশগুলো।