আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ইং, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

নেতিবাচক আলোচনা-পর্যালোচনায় পুঁজিবাজার উন্নয়নের বড় অন্তরায়

মাহবুবা ইসলাম: বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘ সময় যাবত অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । করোনা পরবর্তী খুব অল্প সময় পুঁজিবাজার গতিশীল থাকলেও তারপরে টানা অস্থিরতা চলমান আছে। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ও সমপর্যায়ে অর্থনীতির দেশ গুলির সাথে তুলনা করি আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। কেন আমরা পিছিয়ে এই প্রশ্ন করাটা খুবই যুক্তিসঙ্গত?

পৃথিবীর সকল দেশে গণমাধ্যম,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির ব্যবহার আছে । তারা তার সুফল ভোগ করে আর আমরা তার অপব্যবহার করি। আমরা শুধু সমস্যার কথা প্রচার করি, অন্যের সমালোচনা করি। যিনি যে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না বা প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত নন তার সাক্ষাৎকার/মতামত বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এই প্রচারে যে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়,অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা মোটেও বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

সম্প্রতি একজন বিশেষজ্ঞ বললেন, সূচক ৩০০/৪০০ পয়েন্টের বেশি বৃদ্ধি পাওয়াটা ভয় পায় । অন্য একজন বিশেষজ্ঞ বললেন, পুঁজিবাজার সামান্য নিচে আছে তবে ৫ হাজার ইনডেক্স থাকলে বাজার ঠিক আছে। আরও একজন বিশেষজ্ঞ বললেন শেয়ারবাজারের কোন তথ্য উপাত্ত ঠিক নেই, বিশেষ করে সিডিবিএলের তথ্য, হিসাব গুলো ঠিক নেই। এগুলো সব ভুয়া হিসাব। এ মন্তব্যটি করার আগে সিডিবিএলে চেক করা উচিত ছিল বলে মনে করি। এই উদাহরগুলো গল্প কথা নয় তা খুঁজলে আপনারা ভিডিও রেকর্ড ও পেয়ে যাবেন।

দুঃখের বিষয় হলো তিনি তার অবস্থান থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই জানাতে পারতেন যদি এমন তথ্য তার জানা থাকে। গণমাধ্যমে বলাটা যা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। সত্যিকার অর্থে তিনি যে বিষয়ে কথা বলার জন্য অনুষ্ঠানে এসেছেন সে সম্পর্কে তার ধারণা বা হোম ওয়ার্ক ছিলো না বলে মনে হয়।কিন্তু আমরা যারা সঠিক তথ্য বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে জড়িত আছি তারা বিষয়গুলি বুঝি বলে বিভ্রান্ত হবো না কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি কিভাবে নিবে!

অনেক আলোচক, বিশেষজ্ঞ, বাজার বিশ্লেষক এ ধরনের অনুমান নির্ভর কথা বলে থাকেন যা আমাদের পুঁজিবাজার তথা অর্থনীতির জন্য দুঃখজনক। তথ্য উপাত্ত সমৃদ্ধ গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে যা উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা পালন কর। কিন্তু আমাদের অনেকেই অনুমানের উপর চালিয়ে দেন। কেউ যদি কোন বিষয়ের সমস্যা/ত্রুটি খুঁজে পান তা নিয়ে সমালোচনা করতেই পারেন। এটা স্বাভাবিক কিন্তু আপনি যদি বিষয়টির সমাধান বা উন্নয়নের সুপারিশ করতে না পারেন তবে প্রতীয়মান হয় তিনি আসলে বিষয়টি না বুঝেই অনুমান নির্ভর মন্তব্য করেছেন। এতে এটাই বুঝায় যে, সুযোগের সাথে গা ভাসানো আমাদের বৈশিষ্ট্য।

গত ৫ই আগস্টের পর সর্বত্রই সংস্কার নামক একটি শব্দ মহামারীর মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছ । যেমন ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলন করে বিএসইসির সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। কিন্তু আজও কোন কর্মকর্তার শাস্তি বা চাকরিচ্যুতি ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। তাহলে এই বক্তব্যটি কি বার্তা দিল পুঁজিবাজারে? তাছাড়া দাবি করলেন ডিএসইর নিরপেক্ষ পরিচালকদের পরিবর্তনের জন্য এবং তাও হলো। আরও দাবি জানান টাস্কফোর্স  ও তদন্ত কমিটি করার জন্য তাও হলো। আপনাদের সকলের বক্তব্য পূর্বের কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি তাই বাজার বিশৃঙ্খল এবং উন্নয়ন হয়নি। তাহলে এই সরকারের এবং কমিশনের প্রায় চার মাস অতিবাহিত হতে যাচ্ছে কিন্তু তাদের অর্জন কতটুকু!

আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি আগস্টের ৫ তারিখের পরে মার্কেট টানা চার দিন অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পায়। যখন কমিশন নিয়োগ হয়নি । নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দুই মাস প্রায় ১১০০ পয়েন্ট হ্রাস পায় তাহলে এই দায় কার! আরো অবাক হলাম কমিশন কয়েকটি ব্যাবসায়িক গ্রুপের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন তালিকাভুক্তির বিষয়ে। বিষয়টি খুবই হাস্যকর। কোন কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে টাকা নেওয়া লাভজনক মনে করলে তারা আসবে অন্যথায় আসবেন না। বিএসইসির দায়িত্ব নয় কারো বাড়ি থেকে ডেকে এনে তালিকাভুক্ত করা। তাদের দায়িত্ব, আইন বা পলিসি এমনভাবে তৈরি করা যাতে উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হয়। কিন্তু এ কাজটি বিএসইসির একার নয়! এটি সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে করতে হবে। শুধু বিএসইসি এককভাবে তা করতে পারবে না।

এবার একটু বিনিয়োগকারীদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করি। আমাদের দেশের আইপিও অনুমোদন দেয়া হয় disclosure basis তাই এটার জন্য কমিশন বা অন্য কাউকে দায়ী করা সঠিক হবে না, যদি না কোন তথ্যের গরমিল বা বিভ্রাট না দেখানো যায় বা আইনের পরিপালনে ঘাটতি না হয়। কোম্পানির তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের দায়িত্ব। বিএসইসি অনুমোদন দিলেই বিনিয়োগ করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। সারা পৃথিবীতেই তালিকাভুক্তির পরে কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণে non performing হয়ে যেতে পারে বা হয়ে যায় এতে হতাশ হওয়া বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর দায় চাপানো যথাযথ নয়। নিজের সম্পদ বিনিয়োগে নিজেকে আরও সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঘ শিকারের মানসিকতা পরিবর্তন খুবই জরুরী।

আমাদের পুঁজিবাজার আমাদের অর্থনীতির তুলনায় অতি সামান্য। দেশের রাজনীতিক ক্ষমতা, অর্থনীতি, কমিশন বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয়েছে তবে পুঁজিবাজার বান্ধব বা এটার গুরুত্ব অনুধাবণ করে উন্নয়ন পদক্ষেপ নেওয়ার মতো সরকারের নীতি নির্ধারনী কারো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। সরকারের সঠিক সু-দৃষ্টি ব্যতিত পুঁজিবাজারের অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়। আগামী দিনের অর্তনীতির জন্য পুঁজিবাজার খুবই জরুরী তা অনুধাবন করলেই অর্থনীতির সফলতা আসবে।

সরকার/নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারী, মধ্যস্থতাকারী সকলেই তা মেনে পুঁজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত হবেন। আইনের ব্যত্যয় ঘটলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা, আর লাভ ক্ষতির হিসাব সংশ্লিষ্টদের নিজস্ব চিন্তার বিষয়। এটার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করা যাবে না।

পরিশেষে একটা সুপারিশ রাখতে চাই নিজেদের সম্পদ বিনিয়োগে নিজেকে সচেতন হতে হবে। সুচিন্তিত বিনিয়োগই সমৃদ্ধ অর্থনীতি।

১ টি মতামত “নেতিবাচক আলোচনা-পর্যালোচনায় পুঁজিবাজার উন্নয়নের বড় অন্তরায়”

  • Md DELOWER Hossain says:

    Monno agro এর স্টক ডিভিডেন্ট এর অনুমতি দিতে রেকর্ড ডেট পর্যন্ত যেতে হবে কেন???
    এতে বিনিয়োগকারীরা ধোঁয়াশার মধ্যে থাকে।
    এতে কার ক্ষতি??
    এক মাস আগে স্টক ডিভিডেন্ড ডিক্লিয়ার করার পরেও এক মাসে কি সময় পাওয়া যায় না অনুমতি দিবে কি দিবে না বিএসসি ???

    এতে প্রমাণিত হয় আগের চেয়ারম্যান আর বর্তমান চেয়ারম্যানের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।
    এরা একই জাতের মানুষ।

    যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্টক ডিভিডেন্ড এর অনুমতি প্রদান করা হোক।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.