আজ: বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে তিনদিনব্যাপী “ভাষার রূপান্তর: ডিকলোনিয়াল প্রেক্ষাপটে ভাষা শিক্ষার প্রভাব” শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজেসের আয়োজনে “ভাষার রূপান্তর: ডিকলোনিয়াল প্রেক্ষাপটে ভাষা শিক্ষার প্রভাব” শীর্ষক তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ থেকে শুরু হওয়া এই কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উপনিবেশিক প্রভাবের কারণে ভাষা শিক্ষার পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা করা। সেই সাথে এই পরিবর্তনগুলি কীভাবে বৈশ্বিক শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও ধরণকে প্রভাবিত করছে তা নিয়ে আলোচনা করা।

এই কনফারেন্সে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩০০ জনেরও বেশি গবেষক, শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীরা অংশ নিচ্ছেন। তিনদিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে থাকছেন ছয়জন প্রধান বক্তা, তিনজন খ্যাতনামা গবেষক, দুটি প্লেনারি সেশন, দুটি কোলোকুইয়াম সেশন এবং ১৫১টি প্রেজেন্টেশন। এসব সেশনে বহুভাষিক শিক্ষা, ভাষা নীতি, ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং ডিকলোনিয়াল শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে যা বিস্তৃতভাবে অ্যাকাডেমিক আলোচনার পাশাপাশি ফলপ্রসূ মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করেছে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের অধ্যাপক ও লেখক সলিমুল্লাহ খান, ব্র্যাক ইউনিভিার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ফারহাত আনোয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজেসের সিনিয়র ডিরেক্টর লেডি সৈয়দা সারওয়াত আবেদ এবং ইনস্টিটিউটটির ডিরেক্টর ড. শায়লা সুলতানা।

লেডি সৈয়দা সারওয়াত আবেদ তার উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্যার ফজলে হাসান আবেদের শিক্ষাদর্শন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্যার ফজলে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে একটি সমন্বিত শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তিনি চেয়েছিলেন এখানে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের চেঞ্জমেকার হয়ে গড়ে উঠবে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজেস এর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, এই ইনস্টিটিউটটি নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে চলেছে এবং সেই সাথে মাল্টিলিঙ্গুয়ালিজমকে বৈশ্বিক যোগাযোগের সেতু হিসেবে এগিয়ে নিতে করতে কাজ করছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, বাংলা ভাষা আমাদের পরিচয় ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। বহুভাষিকতার প্রসার যেন কখনোই আমাদের মাতৃভাষাকে ছাপিয়ে না যায় সেই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ভাষাশিক্ষায় উদ্ভাবন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভূমিকার জন্য ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজেস এর প্রশংসা করেন তিনি। তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনকে ভাষা শিক্ষার উন্নয়নে নতুন ধারণা ও সমাধান তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে উল্লেখ করেন ডাঃ বিধান রঞ্জন।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, এই সম্মেলনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আলোচনা এবং ধারণা বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করা। তিনি শিক্ষার হার বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে এবং একই সাথে শুধুমাত্র বিদেশি ভাষার উপর নির্ভরশীলতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইংরেজি ভাষার বৈশ্বিক গুরুত্ব রয়েছে। একই সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় ভাষাগত বৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দেবার বিষয়েও জোর দেন তিনি। সবাই যাতে সহজে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য মাতৃভাষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে তিনি আহবান জানান।

তামারা হাসান আবেদ বলেন, পাঠ্যক্রম এমনভাবে তৈরি করা উচিত যেখানে ভাষাগত বৈচিত্র্যতাকে উৎসাহিত করা হয়। শিক্ষা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে ওঠে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

প্রফেসর ফারহাত আনোয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, তিনদিনব্যাপী এই কনফারেন্সটি ভাষার মাধ্যমে সবার মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দেবে। তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে ভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সমাপনী বক্তব্যে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের মূল বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ধরেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজেসের এর ডিরেক্টর ড. শায়লা সুলতানা।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলেনে উল্লেখযোগ্য বিশেষজ্ঞ আলোচকদের মধ্যে থাকছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লাইড লিঙ্গুইস্টিক, ইংলিশ এবং এশিয়ান স্টাডিজের প্রফেসর সুরেশ কানাগারাজা, নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটির অফ অকল্যান্ডের ফ্যাকাল্টি অফ এডুকেশন অ্যান্ড সোশাল ওয়ার্কের প্রফেসর স্টিফেন মে, অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো প্রফেসর সেন্ডার ডোভচিন। অনলাইনের মাধ্যমে এই কনফারেন্সে অংশ নেবেন ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ইউভাসকুলার প্রফেসর ইমেরিটাস সিপরা লিপানেন, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ইমেরিটাস রবার্ট ফিলিপসন এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনির প্রফেসর ইমেরিটাস অ্যালিস্টার পেনিকুক।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.