শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ
শেয়ারবাজার ডেস্ক : ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক-উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্যগুলো সরিয়ে ফেলতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান।
আইনজীবীরা জানান, বিটিআরসিকে এরই মধ্যে শেখ হাসিনার সবধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এসবের বাইরে তার সাধারণ কোনো বক্তব্য প্রচারে বাধা নেই বলেও জানান ট্রাইব্যুনাল।
আদালতের আদেশের বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, একটি মামলার বিষয়ে শেখ হাসিনার কিছু বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। যেখানে কিছু বক্তব্যে আমরা শুনেছি তিনি বলেছেন, তার নামে যেহেতু ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই তিনি ২২৭টি মার্ডার করার সার্টিফিকেট পেয়েছেন। তিনি আরও বলছেন, তোমাদের যে বাড়িঘর পোড়াচ্ছে, তাদের কি বাড়িঘর নেই। তিনি এ শব্দগুলো ব্যবহার করে মামলার ভিকটিমদের এক ধরনের হুমকি দিয়েছেন।
প্রসিকিউটর গাজী আরও বলেন, যেসব ভুক্তভোগী কেবল ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন, তাদের কিন্তু বিচারকের সামনে সাক্ষ্য দিতে হয়। এ ধরনের বক্তব্য যদি প্রকাশ হয় তাহলে আমরা সাক্ষীদের আর ট্রাইব্যুনালে এনে সাক্ষ্য নিতে পারবো না। এছাড়া যেসব স্থানে এ সাক্ষীরা আছেন সেখানে গিয়ে তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত কর্মীরা তাদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নিতে পারবেন না।
হেট স্পিচ এমন একটি অপরাধ, যেটি শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বে সব আইনেই এটি ক্রিমিনাল অফেন্স। যেটি বর্তমানে করা হচ্ছে, তা বন্ধের জন্য এবং ভবিষ্যতের পাবলিকেশন বন্ধের জন্য এবং এরই মধ্যে যে হেট স্পিচগুলো সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে আছে সেগুলো মুছে ফেলার জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম। ট্রাইব্যুনাল আমাদের আবেদনটি শুনেছেন। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের আইন শুনেছেন। আন্তর্জাতিক আইনগুলো শুনেছেন। একই সঙ্গে বর্তমান আইনগুলো শুনেছেন। এ আইনগুলো শুনে আদালত আমাদের আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। পাশাপাশি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন, যে সব হেট স্পিচ এখনো বিদ্যমান আছে সেগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য। আর ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের হেট স্পিচ প্রচার না হয় সে বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা আজকের এ আবেদনটি করেছিলাম শুধু একজন আসামির ক্ষেত্রে, সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনা। কারণ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে শুধু উনার হেট স্পিচগুলো আছে। শুধু শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও এমন বক্তব্য যা ট্রাইব্যুনালের ইনভেস্টিগেশনে বাধাগ্রস্ত হয় এ ধরনের প্রচারণা বন্ধ চেয়ে আবেদন করেছি। আজ থেকেই এ আদেশ পালনের কথা আদালত বলেছেন।
জাতিসংঘ থেকে বলা আছে, কোনো স্পিচগুলো হেট স্পিচ আর কোনগুলো সাধারণ। এমন ছয়টি নির্দেশনা দেওয়া আছে। আর এ ছয়টি বিষয়ই কাভার করে শেখ হাসিনা যে বক্তব্যগুলো দিয়েছেন। এর বাইরে শেখ হাসিনার কোনো সাধারণ বক্তব্য প্রচারে নিষেধ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী-সরকারকে নিয়ে নানা কটূক্তি করেছেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
গত ১৮ নভেম্বর জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এছাড়া গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ১৫০ বেশি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে। গ্রেফতার আছেন সাবেক ১০ মন্ত্রীসহ ২৫ জন।