গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে দুই দিনব্যাপী এসটিআর শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কর্মে জোর দিতে হবে’
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কর্ম বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এর ব্যবহার যত বাড়বে, শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা তত সহজ হবে। আর এভাবেই আগামীর বিশ্ব আরও উন্নত ও বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে উঠবে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ‘সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি ৫.০-এসটিআই’ শীর্ষক ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান ও ডেনামার্কসহ বিশ্বের ৩২টি দেশের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও গবেষকরা অংশ নেন।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য রাখেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, অর্গানাইজিং চেয়ার এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আজাদ। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ফায়জুর রহমান, রেজিস্ট্রার ক্যাপ্টেন (নেভি) অব. শেখ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, টেকসই উন্নয়নে ইতোমধ্যেই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিকালে এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প; যা লাখো গ্রামীণ পরিবারে আজ আস্থার প্রতীক। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব শিল্প চর্চায় বস্ত্রখাতসহ অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ। আগামীতেও অন্যান্য ক্ষেত্রে এই ধারা চালুর আহ্বান জানান তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, আধুনিক শিল্প আজ জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এমন প্রেক্ষাপটে ‘ইন্ডাস্ট্রি ৫.০’র লক্ষ্য অর্জনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং ইন্টারনেট অফ থিংসের মত বিষয়গুলো নিয়ে এসটিআই সম্মেলন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেন, অর্থনীতি, সমাজ ও জীবনযাত্রা- বাংলাদেশ সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন এবং এর গবেষণা আগামীতেও অগ্রগতির এই ধারা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ৫.০’র সঙ্গে আধুনিক বিশ্বের তাল মিলিয়ে চলার নানা অনুষঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসটিআই সম্মেলনের বড় একটি সফলতা হলো তরুণ গবেষকদের মূল ধারায় নিয়ে আসা। এর মাধ্যমে তারাও আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় নানাভাবে অবদান রাখছে। এ সময় তিনি ৫.০’র প্রভাবে বর্তমান বিশ্ব মার্কেটের আকার এখন ১৪৮ বিলিয়ন ডলার; যা আগামী ছয় বছর তথা ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮ শতাংশ বেড়ে ৮২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
অর্গানাইজিং চেয়ার এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আজাদ সম্মেলনের এসটিআই ৫.০’র আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সাসটেইনেবল টেকনোলজির ভূমিকা অপরিহার্য। কারণ, টেকসই ছাড়া কোনো উন্নয়নই চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখে না। বক্তব্যে তিনি এসটিআই আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৫২টি গবেষণা প্রবন্ধ জমা পড়ে; যা থেকে ১০২টি প্রবন্ধ নির্বাচিত হয়। আয়োজক কমিটি জানান, সম্মেলনে মূলত চারটি পৃথক ট্র্যাক প্রাধান্য পাবে। এর মধ্যে রয়েছে- ইন্টেলিজেন্ট কম্পিউটিং, নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেমস; এনার্জি, রোবটিক্স, ইলেক্ট্রনিক্স, সেন্সরস অ্যান্ড কমিউনিকেশন; ইন্ড্রাস্টি ৫.০ ডিজাইন অ্যান্ড এপ্লিকেশন এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং।
সম্মেলনের প্রথম দিন আলোচনা সভা ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ছাড়াও প্যানেল ডিসকাশন, ১০ টি এমওআই সাক্ষর, গবেষণাপত্র উপস্থাপন, নতুন আইডিয়া তৈরি, সাসটেইনেবল টেকলোজির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।