নতুন কমিশনের সাড়ে চার মাস
পুঁজিবাজারে নজিরবিহীন ৭২২ কোটি টাকা জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক : শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের আর্থিক খাতের প্রায় সব নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিবর্তন এসেছে। বিগত সরকারের সময়ে যেসব লুটপাট হয়েছে, তা বন্ধে নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের সংস্কারমূলক উদ্যোগ। তারই অংশ হিসেবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বেও পরিবর্তন এসেছে। ৫ আগস্ট সরকার পতন হওয়ার পর ১৯ আগস্ট সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তার নেতৃত্বাধীন কমিশন বিগত সরকারের আমলে পুঁজিবাজারে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি লুটপাট হয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশই লুটপাট হয়েছে শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে। যার কিছু অংশ চিহ্নিত করে এরই মধ্যে অভিযুক্তদের প্রায় ৭২২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিএসইসির কমিশন সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই সময়ে অন্তত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি পর্যালোচনা করে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি শেয়ার কারসাজির পেছনেই আলোচিত কারসাজিকারক সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়েরের (হিরু) সম্পৃক্ততা পেয়েছে বিএসইসি। ফলে হিরুর পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের ৭২১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমান পেয়েছে বিএসইসি
খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন সর্বপ্রথম ইমাম বাটনের (বর্তমানে হামি ইন্ডাস্ট্রিজ) শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে কারসাজিকে চিহ্নিত করেছে। এ অপরাধের দায়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ৯২১তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিব হাসানকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এটিই বর্তমান কমিশনে অধিনে কোন শেয়ারে কারসাজির অপরাধে করা প্রথম জরিমানা। একই কমিশন সভায় কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারের লেনদেনে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় ৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এক্ষেত্রে শাহারা জামান ও তার সহযোগী আশফাকুজ্জামানকে আড়াই লাখ টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা এবং লুতফুল গনি টিটু, মাহমুদুল হাসান, খাইরুল হাসান বেনজু, লুতফুন্নাহার বেগম ও আকিকুন্নাহারকে ১ লাখ টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কমিশনের ৯২৩তম সভায় প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিকে চিহ্নিত করে বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ চার ব্যক্তি এবং তিন প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা, আবুল খায়ের হিরুকে ২৫ লাখ টাকা, ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে ৭৫ লাখ টাকা, মোনার্ক মার্ট লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতব্বরকে ১০ লাখ টাকা, লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা এবং মো. জাহেদ কামালকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তীতে গত ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অপরাধে সোনালী পেপারের শেয়ারধারী তিন পরিচালককে ২০ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের জরিমানা করা হয়েছে তারা হলেন- সোনালী পেপারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহফুজা ইউনুস ও পরিচালক মোহাম্মদ জাবেদ নোমান।
দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে একক কোন শেয়ার কারসাজিতে সর্বোচ্চ জরিমানা করা হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের ক্ষেত্রে। গত ১ অক্টোবার অনুষ্ঠিত কমিশনে ৯২৪ তম সভায় এই জরিমানা করা হয়। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির অপরাধে সংশ্লিষ্ট চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বর্তমান কমিশন। এর মধ্যে মুশফিকুর রহমানকে ১২৫ কোটি, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি, আব্দুর রউফকে ৩১ কোটি ও মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া শেয়ার কারসাজির দায়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি, আর্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে ৭০ কোটি, জুপিটার বিজনেস লিমিটেডকে সাড়ে ২২ কোটি, অ্যাপোলো ট্রেডিং লিমিটেডকে ১৫ কোটি ১ লাখ ও ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে ৪ কোটি ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
৯৩২তম কমিশন সভায় গত ১৯ নভেম্বর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে-লিজিংয়ের শেয়ার কারসাজির আলামত চিহ্নিত করে ৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। জরিমানা হওয়া ব্যক্তিরা হলেন বে লিজিংয়ের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুরাইয়া বেগম, সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এবং তুষার এলকে মিয়া। আর প্রতিষ্ঠানটি হলো সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড। এর মধ্যে বে-লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করায় সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেসকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে আইন ভঙ্গ করে শেয়ার বিক্রি করায় সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরকে ১২ কোটি টাকা, বে-লিজিংয়ের তৎতকালীন পরিচালক অধ্যাপক সুরাইয়া বেগমকে ৫ কোটি টাকা এবং তুষার এলকে মিয়াকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন।
বিএসইসির ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯৩৪ তম সভায় তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে হিরু, তার পরিবারের সদস্য এবং প্রতিষ্ঠানকে ১৩৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- ফরচুন সুজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং সোনালী পেপার। এসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান এবং হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের সিকিউরিরিটিজ আইন ভঙ্গ করার প্রমান পেয়েছে বিএসইসি। সে জন্য উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই বিশাল পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ফরচুন সুজের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় আবুল খায়ের ওরফে হিরুকে ১১ কোটি টাকা, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ৭ কোটি ২০ লাখ, নিজের প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১৫ কোটি, হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি, বোন কনিকা আফরোজকে ১৯ কোটি এবং ভাই সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা, সাজিদ মাতবরকে ১ কোটি ৬০ লাখ, মোহাম্মদ বাসারকে ১ কোটি ১৫ লাখ, কনিকা আফরোজকে ২ কোটি ৯০ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৯০ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ১ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৮৪ লাখ এবং আবুল কালাম মাতবরকে ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ৪ কোটি ১৫ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১২ লাখ, আলেয়া বেগমকে ১ লাখ, মোহাম্মদ বাসারকে ১ লাখ, মোনার্ক হোল্ডিংকে ১ লাখ এবং সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর সোনালী পেপারের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ১ লাখ টাকা, আবুল কালাম মতবরকে ১ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, কাজী ফরিদ হাসানকে ৩৫ লাখ এবং কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯৩৫ তম কমিশন সভায় তিন কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে মোট ১৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এর মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স বা বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় এক ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৬১ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। বিডি ফাইন্যান্সের এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩২ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় সামির সেকান্দারকে। এছাড়া আবু সাদাত মো. সায়েমকে ২২ কোটি টাকা, আনিকা ফারহিনকে ৭ কোটি টাকা, আনোয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আনোয়ার গ্যালভানাইজিংকে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্সকে ৮৫ লাখ টাকা, মাহের সেকান্দারকে ৫২ লাখ টাকা, আফরা চৌধুরীকে ৩৫ লাখ টাকা, আবদুল মবিন মোল্লাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বিএসইসি জানিয়েছে, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে এসব কারসাজিকারকরা কারসাজিতে জড়িত ছিলেন।
আর ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার কারসাজির ক্ষেত্রে আমিনুল ইসলামকে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং নাবিল ফিড মিলসকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এক মাসের কম সময়ে আইন লঙ্ঘন করে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন। এর বাইরে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে সোহেল আলম নামের এক ব্যক্তিকে। এছাড়া এখলাসুর রহমানকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বীকন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, বীকন মেডিকেয়ারকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা, বীকন ফার্মাকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ও নুরুন নাহার করিমকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বিএসইসি জানিয়েছে, উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে ২০২২ সালের ২১ জুন থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটান।
আরও যেসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের জরিমানা হয়েছে
বর্তমান কমিশনের অধিনে গত ৪ মাসে অনুষ্ঠিত সভায় আরও অন্তত ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব ঘাটতি থাকায় ৫ ব্রোকারেজ হাউসকে মোট ২১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ডার্ন সিকিউরিটিজকে ১ লাখ টাকা, আনোয়ার সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা, প্রুডেনশিয়াল সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা, এনএলআই সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা এবং এএনডব্লিউ সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে কারসাজি করায় মাহফুজা আক্তারকে ১০ লাখ টাকা এবং দেওয়ান সালেহিন মাহমুদকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের মূল ব্যবসার বাইরে বিনিয়োগ করার প্রমান পেয়েছে বিএসইসি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মোনার্ক মার্ট এবং সফটাভিন লিমিটেডে বিনিয়োগ করা অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংয়ের হিসাবে ফেরত আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ অর্থ ফেরত আনতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জরিমানা হতে পারে আরও যেসব প্রতিষ্ঠানের
কমিশন সভায় এডভেন্ট ফার্মার ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরের ঘোষিত লভ্যাংশের সম্পূর্ণ অংশ বিধি অনুসারে নির্ধারিত সময়ে শেয়ারহোল্ডারদের পরিশোধে ব্যর্থ হলে ইস্যুয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ৪ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং এ ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ব্যক্তিগত দায় হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। আবার বিডি পেইন্টস, ওরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, সাফকো স্পিনিং মিলস, মামুন এগ্রো প্রডাক্টস, লুব-রেফ বাংলাদেশ, কৃষিবিদ সিড, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন ও প্যাসিফিক ডেনিমসের ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরের ঘোষিত লভ্যাংশের সম্পূর্ণ অংশ বিধি অনুসারে নির্ধারিত সময়ে শেয়ারহোল্ডারদের পরিশোধ না করায় অবশিষ্ট অপরিশোধিত অংশ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় বিডি পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ৯৭ লাখ, ওরিজা এগ্রোর এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ৪৭ লাখ, সাফকো স্পিনিংয়ের এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ২০ লাখ, মামুন এগ্রো প্রডাক্টসের এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ১৩ লাখ, লুব রেফের এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ২ কোটি ৩৫ লাখ, কৃষিবিদ সিডের এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ১০ লাখ, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ১ কোটি ৯১ লাখ ও প্যাসিফিক ডেনিমের এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া) প্রত্যেককে ১৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। এ ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ব্যক্তিগত দায় হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।