লারনিং টুগেদার: আ জেন্ডার জাস্টিস জার্নি”
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। রপ্তানি আয়ের ৮৩% ই অর্জিত হয় এই খাত থেকে। তৈরি পোশাক শিল্প খাত ২.৫৯ মিলিয়ন কর্মীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে, যার মধ্যে ৫৭% নারী কর্মী। যদিও নারী কর্মীরা এই খাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন লাভ করেছে, তবুও তাঁরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, যৌন হয়রানি সহ কর্মক্ষেত্রের বাইরে বিশেষ করে যাতায়াতে নানাবিধ সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
একটি নিরাপদ ও বৈষম্যমুক্ত কর্মস্থল নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য, পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় যৌন হয়রানি সহ নানা সমস্যায় অভিযোগ গ্রহণ এবং নিষ্পত্তিকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, নারীদের কর্মস্থলে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় মজুরি প্রদান আইনানুগভাবে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে “পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের ন্যায্যতা প্রাপ্তি” প্রকল্পের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় সজাগ কোয়ালিশন “লারনিং টুগেদার: আ জেন্ডার জাস্টিস জার্নি” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা আয়োজন করেছে। উক্ত আলোচনা সভাটি গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ঢাকার ব্র্যাক ইন-এ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ডেলিগেশন এর গভর্নেন্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রাম ম্যানেজার লায়লা জেসমিন বানু; কর্মজিবি নারীর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য সানজিদা সুলতানা; ইউএনএফপিএ এর জিবিভি ক্লাস্টার কোঅর্ডিনেটর রুমানা খান; এবং ক্রিস্টিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, পোশাক শিল্পের নিয়োগকর্তা ও ক্রেতা (বায়ার), এনজিও ও আইএনজিও প্রতিনিধিরা, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, শ্রমিক অধিকারভিত্তিক সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও), বিজিএমইএ এবং বিএকেএমইএ প্রতিনিধিরা, ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যরা এবং মিডিয়া এই প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন এবং বিষয়টি নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও উদ্বেগ শেয়ার করেছেন।
তাপস বড়ুয়া, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ইথিক্যাল ট্রেডিং লিমিটেড, বলেন: “তৈরি পোশাক সেক্টরে কর্মীদের অভিযোগগুলি সাধারণত মৌখিকভাবে সমাধান করার প্রবণতা রয়েছে। ফ্যাক্টরিগুলি প্রায়ই অভিযোগগুলি ডকুমেন্ট করেন না, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে এটি তাদের অডিট ফলাফলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
অনীন্দিতা ঘোষ, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, সলিডারিটি সেন্টার, বলেন ” নারী কর্মীদের অটোমেশন সংক্রান্ত ট্রেনিং না দেওয়া এবং শিশু যত্ন কেন্দ্রের অভাবে পোশাক শিল্প খাতে নারী শ্রমিক হ্রাস পাচ্ছে।”
মোহাম্মদ মারুফ হোসেন, ডেপুটি ম্যানেজার, অ্যাকশনএইড, জানান: “পোশাক শিল্পে মধ্যম স্তরের ম্যানেজমেন্ট পদে নারীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। বেশিরভাগ নারী সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কর্মরত। তদুপরি, একজন নারী শ্রমিক ৩৫ বছর ঊর্ধ্ব বয়সী হলে, তাকে প্রায়ই ফ্যাক্টরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।”
সানজিদা সুলতানা, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, কর্মজীবী নারী, বলেন: “২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং ২০০৯ সালের হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী কর্মস্থলে যৌন হয়রানির বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ কর্মস্থলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) প্রতিরোধে একটি আইন খসড়া করেছে এবং জমা দিয়েছে। এছাড়া, আইএলও কর্মস্থলের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা গাইডলাইনে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা কর্মস্থলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে।”
বাংলাদেশে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ডেলিগেশন এর গভর্নেন্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রাম ম্যানেজার লায়লা জেসমিন বানু বলেন: “বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জেন্ডার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে প্রকল্পগুলির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে প্রকল্পগুলিতে সেগুলি প্রয়োগ করা হবে।”
নুজহাত জাবিন, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ক্রিস্টিয়ান এইড, আলোচনার উপসংহার টেনে বলেন, “লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় কর্মক্ষেত্র এবং কমিউনিটিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। কমিউনিটিতে লিঙ্গ-বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্প্রদায়গুলির অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা সমাধানে কাজ করা প্রয়োজন।”