আজ: বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫ইং, ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৬ জানুয়ারী ২০২৫, সোমবার |

kidarkar

চতুর্থ প্রজন্মের বেশিরভাগ ব্যাংকের মুনাফায় উল্লম্ফন

নিজস্ব প্রতিবেদক: লুটপাট, আমানতকারীদের আস্থাহীনতা, ডলার ও তারল্য সমস্যাসহ নানামুখী সংকটের মধ্যে যাচ্ছে ব্যাংক খাত। দুর্বৃত্তায়নের ছোবলে বেকায়দায় পড়েছে অনেক ব্যাংক। এর মধ্যেও সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে ভালো মুনাফা করেছে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে সুদহার বৃদ্ধি। এ ছাড়া কমিশন আয়, ট্রেজারি ও ডলার ব্যবসা থেকেও ভালো মুনাফা করেছে ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকাররা জানান, ২০২৪ সালের প্রাথমিক হিসাবনিকাশ সম্পন্ন শেষ হয়েছে। তবে বিস্তারিত ব্যালান্সশিট প্রস্তুত করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। প্রাথমিক হিসাবনিকাশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃনিরীক্ষক দ্বারা যাচাই-বাছাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন শেষে চূড়ান্ত হবে। তবে পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব হবে। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাংক তাদের পরিচালন মুনাফার তথ্য প্রকাশ করে না।

বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চতুর্থ প্রজন্মের ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৬টি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪১৯ পরিচালন মুনাফা করেছে এনআরবিসি ব্যাংক। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৩৭৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এনআরবিসি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। এদিকে আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও অতিরিক্ত তারলেও সমসাময়িক ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক।

চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে মধুমতি ব্যাংক। গত বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২১৩ কোটি টাকা। এছাড়া সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ২২৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ১৭৪ কোটি টাকা মুনাফা করা মিডল্যান্ড ব্যাংক বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া  মেঘনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১৬৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে  ২০৫ কোটি টাকা এবং এনআরবি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১৪৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৪ সাল শেষে হয়েছে ২০২ কোটি টাকা।

চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক কয়েক বছর ধরেই লোকসানের ধারায় রয়েছে। অন্যদিকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সংঘবদ্ধ দুর্নীতির কারণে ডুবতে বসেছে। ব্যাংক দুটির ক্ষতের পরিমাণ জানতে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারা বিশদ ফরেনসিক পরিদর্শন শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের মুনাফা কত হয়েছে এটি এখনো বলার সময় আসেনি। তবে এনআরবিসি ব্যাংক চেষ্টা করেছে সর্বোত্তম সেবা দিয়ে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের। এজন্য আমাদের আমানত সংগ্রহ বেড়েছে। অন্যদিকে ঋণের আদায়ও বেড়েছে। নতুন বছরে আমাদের লক্ষ্য প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে আমরা সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও নিম্ন আয়ের মানুষদেরকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা দিয়ে যাবো।

এদিকে দেশের বড় ব্যাংকগুলোর মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া পূবালী ব্যাংকের ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংকের ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়ার ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকের ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংকের ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংকের ৯৭৫ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৮৫০ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ৮৩০ কোটি টাকা ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৪৪ কোটি টাকা।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন জানান, ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা উঠে যাওয়ার পর তাদের নিট সুদ আয় বেড়েছে। আপনি বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, ভালো ব্যাংকগুলোর মোট সুদ আয়ের ৬০-৭০ শতাংশ আসছে ঋণ খাত থেকে। আর ২০ শতাংশের মতো সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ থেকে এবং বাকিটা অন্য ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি রেখে।

তিনি আরও বলেন, দেশের ভালো ব্যাংকগুলো এখন তাদের আয়ের এক-চতুর্থাংশই সুদের বাইরে থেকে আয় করা শুরু করেছে। অর্থাৎ জনগণকে নানা সেবা দিয়ে তার বিনিময়ে সামান্য ফি-কমিশন চার্জ করে তারা আয় বাড়াতে পারছে। সুদনির্ভর ব্যালান্স শিট থেকে সেবা বাবদ অর্জিত ফি নির্ভর ব্যালান্স শিটে যেতে পারাটা সত্যিকারের আধুনিক ব্যাংকিং। আবার এটাও সত্যি যে এ বছর অনেক ব্যাংক পারফরম্যান্স খারাপ করার কারণে তুলনামূলক সুনাম সম্পন্ন ব্যাংকগুলো আরো বেশি ভালো করেছে।

২ উত্তর “চতুর্থ প্রজন্মের বেশিরভাগ ব্যাংকের মুনাফায় উল্লম্ফন”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.