১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা
শেয়ারবাজার ডেস্ক : ভালো ও মন্দ ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে পারছে না সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আর উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে প্রভিশন ঘাটতিতে শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলিয়ে মোট ১০টি ব্যাংকের মোট সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। কয়েকটি ব্যাংক তাদের লক্ষ্যমাত্রার বেশি সঞ্চিতি রেখেছে। যার ফলে ব্যাংক খাতে সার্বিক প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। গত জুনে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৩১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২৪ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন ব্যাংকের যে অবস্থা তাতে প্রভিশন ঘাটতি হবে। কারণ দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সম্প্রতি খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বেশি বেড়েছে। তাই প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে। এখানে শতভাগ প্রভিশন রাখা দরকার। কারণ একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িত। এভাবে প্রভিশন বাড়তে থাকলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। প্রভিশন ঘাটতি কমাতে হলে আগে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাছাই-বাছাই করে দিতে হবে, যাতে টাকাগুলো আবার ফেরত আসে।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিং আলাদা করে রাখার বিধান রয়েছে। প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অশনি সংকেত। কারণ এটি ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে, যা মূলত উচ্চ খেলাপি ঋণের ফল।
তথ্যমতে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৪১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এই প্রভিশন ঘাটতির মূলে রয়েছে উচ্চ খেলাপি ঋণ। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, যেটা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। এসব খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণে পরিণত হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুজিবুর রহমানকে কল করলেও তিনি ধরেননি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। এর আগে জুন শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে তাদের ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। এর আগে জুন শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা।
প্রভিশন ঘাটতিতে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বেসিক ব্যাংক। এই সময়ে ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এর আগে জুন শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বিডিবিএলের সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৪১ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৩২৭ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫৭৪ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৩৮৭ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।