আজ: শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫ইং, ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার |

kidarkar

উন্নয়ন বাজেট থেকে বাদ যাচ্ছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে পরিবহন অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু বৈদেশিক ঋণের ১৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে না। নতুন করে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৮১ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ব্যয় কমছে সরকারি তহবিলেরও। এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে সরকারি তহবিল দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে সরকারি তহবিল থেকেও বাদ যাচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলিয়ে বাদ যাচ্ছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা।

বৈদেশিক তহবিলের বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ৫০ বছরের মধ্যে এত বরাদ্দ কমাতে হয়নি কখনো। এমনকী করোনা মহামারির সময়েও কমাতে হয়েছে এর চেয়ে অনেক কম। এ অবস্থার নেপথ্যে রয়েছে প্রধানত পাঁচটি কারণ। এগুলো হলো- আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় না করা, অন্তর্বর্তী সরকারের কড়াকড়ি, অদক্ষতায় সময়মতো কাজ করতে না পারা এবং পুরোনো সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন সেক্টর, মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ ভাগবাটোয়ারার কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্পও বাদ দেওয়া হচ্ছে।

রেকর্ড পরিমাণে বৈদেশিক ঋণ কাটছাঁট প্রসঙ্গে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (ফাবা ও আইসিটি) নূর আহমদ বলেন, আমরা পরিবর্তিত অবস্থানের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। কিছু প্রকল্প বদল হয়েছে। কিছু রি-ভিজিট করতে হচ্ছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ছিল। এগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দেওয়া হচ্ছে। যৌক্তিক যতটুকু ব্যয় করা যায় ততটুকু করতে হচ্ছে। কারণ আমরা চাই না বৈদেশিক ঋণের একটি টাকাও অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যবহার হোক।’

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এর পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা। এ বরাদ্দ দিয়ে শিগগির সেক্টর, মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করবে পরিকল্পনা কমিশন।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নেও বিরাজ করছে করুণ দশা। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের এক শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেনি। এগুলো হলো- স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার এখনো ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। সার্বিকভাবে এডিপির বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

গুরুত্ব পাচ্ছে বিদ্যুৎ-সড়ক
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১৫ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ২০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা পাচ্ছে শিক্ষা বিভাগ। স্বাস্থ্য খাতে ৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। ৩২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগে। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৪৮ হাজার ১১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

রেকর্ড পরিমাণে ব্যয় কমানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, প্রকল্পে টাকার চাহিদা কম। অনেক প্রকল্পে টাকা খরচ হয়নি। আমরা সব কিছু রিভিশন করছি। আমাদের কাছ থেকে বরাদ্দ কম বা বেশি দেওয়ার বিষয় না। যাদের প্রকল্প তাদের থেকে উদ্যোগ নেওয়া। যাদের প্রকল্প তারাই খরচ করতে পারেনি। এ কারণেই মূলত বরাদ্দ কমছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.