সিপিডির গবেষণা
২০২৩ সালে করপোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ ছিল প্রায় ১.১৩ লাখ কোটি টাকা

শেয়ারবাজার ডেস্ক : ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে, যার প্রায় ৫০ শতাংশই করপোরেট কর ফাঁকির কারণে। সিপিডির একটি গবেষণা প্রতিবেদন এ তথ্য তুলে ধরেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, কর ফাঁকির পরিমাণ গত এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে ২০২৩ সালে, যখন করপোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
গবেষণাটি সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট তামিম আহমেদ উপস্থাপন করেন এবং তিনি উল্লেখ করেন যে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী বাংলাদেশের কর হার কমে যাচ্ছে, যার মধ্যে পোশাক, আইটি ও অন্যান্য খাতে বিশেষ কর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে, ২ লাখ ৮৮ হাজার রেজিস্টার্ড কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ, অর্থাৎ ২৪ হাজার ৩৮১ কোম্পানি ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছে।
গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, "যদি সরকার উচ্চমাত্রার রাজস্ব আদায় করতে না পারে, তবে ভর্তুকি, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং দক্ষ জনবল তৈরি করা সরকারের জন্য কঠিন হবে।" তিনি আরও বলেন, "রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় উৎস দুইটি—করপোরেট কর এবং ভ্যাট, যা মিলিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৬০% রাজস্ব আসে।"
তিনি সরকারের কর সংক্রান্ত লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করে বলেন, "প্রতি বছর বাজেটের সময় কর হার কমানোর চাপ থাকে, যার ফলে সরকারের কর লক্ষ্য প্রায়শই বিচ্যুত হয়। এটি দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।"
ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিনও একই মত পোষণ করেন, "নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে, বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন করছে।"
সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে যে, কর ফাঁকির মূল কারণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ করের হার, দুর্বল প্রয়োগ, জটিল আইনি কাঠামো এবং ব্যাপক দুর্নীতি। তাদের মতে, "কর ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে, উচ্চ মাত্রার কর ফাঁকি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং যারা আইন মেনে চলে, তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।"
সিপিডি এও সুপারিশ করেছে যে, ডিজিটালাইজেশন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যাতে ব্যবসায়ী এবং এনবিআর উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হয়। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে, লেনদেনের ট্র্যাকিং এবং ট্যাক্স রিটার্নের যাচাই করা সহজ হবে, যা কর ফাঁকি রোধে সহায়ক হবে।
এছাড়া, সিপিডি আরও উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশে কর ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং কঠোর প্রয়োগ ব্যবস্থা, দুইটি বিষয় একত্রে রাজস্ব ব্যবস্থাকে আরো কার্যকর এবং স্বচ্ছ করে তুলতে পারে। যদি এসব পদক্ষেপ নেয়া না হয়, তবে দেশের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে এবং সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে।
এই বিভাগের আরও খবর

সরকার ১১ মাসে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা

মূল ব্যবসায় ধস, ট্রেজারি আয়েই মুনাফা টিকিয়ে রেখেছে ব্যাংকগুলো

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য জট নিরসনে এনবিআরের বিশেষ আদেশ জারি

এডিবি-আইএমএফের সহায়তা না পেলেও বাস্তবসম্মত বাজেট দেবো : অর্থ উপদেষ্টা

প্রবাসী আয়ের সোনালী সময়: এপ্রিল মাসে গড়লো দ্বিতীয় রেকর্ড
