গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত, মৃত্যুসংখ্যা ছাড়াল ৫৩ হাজার ৩৩০

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত, মৃত্যুসংখ্যা ছাড়াল ৫৩ হাজার ৩৩০


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর সামরিক হামলা থামার কোনো লক্ষণ নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ভয়াবহ আগ্রাসনে গাজায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৩৩৯ জনে।

 

রোববার (১৮ মে) তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এই তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত একদিনে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বিমান হামলায় নিহতদের মরদেহ গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে আনা হয়েছে। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩৬০ জন।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৩৪ জনে পৌঁছেছে। তবে এই পরিসংখ্যানের বাইরেও অনেক হতাহত ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার করা এখনো সম্ভব হয়নি।

গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবারও নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩ হাজার ১৯৩ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার। এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যত ভঙ্গ করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ ১৫ মাসের সামরিক আগ্রাসনের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও তা ছিল কৌশলগত ও সাময়িক। গাজা থেকে পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার এবং হামাসের সঙ্গে স্থায়ী সমঝোতা না হওয়ায় উত্তেজনা আবারও চরমে ওঠে। মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফের বোমা বর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় চলমান এই সহিংসতায় উপত্যকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ধ্বংস হয়েছে অধিকাংশ অবকাঠামো—হাসপাতাল, বিদ্যালয়, মসজিদ, বাসগৃহসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র। এর আগেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (ICJ) গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে এখন পর্যন্ত গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি।

বিশ্ব আজ যখন একবিংশ শতাব্দীর অগ্রগতির গল্প বলছে, তখন গাজার আকাশে এখনও ভেসে বেড়াচ্ছে যুদ্ধবিমানের গর্জন, মাটিতে পড়ে আছে শিশু ও নারীর নিথর দেহ। গাজা যেন মৃত্যুপুরী, যেখানে প্রতিটি প্রহরই মৃত্যুর খবর নিয়ে আসে।