ইশরাকের শপথ দাবি, নগর ভবনে টানা পঞ্চম দিনের বিক্ষোভে অচল গুলিস্তান

19 May 2025, 02:56 PM
ইশরাকের শপথ দাবি, নগর ভবনে টানা পঞ্চম দিনের বিক্ষোভে অচল গুলিস্তান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিশ্চিত করার দাবিতে টানা পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন চলছে নগর ভবন এলাকায়। সোমবার (১৯ মে) সকাল থেকে নগর ভবন ঘেরাও করে সমর্থকরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান। গুলিস্তানের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখায় পুরো এলাকায় যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে নগর ভবনের সামনে এবং গুলিস্তান মাজার গেট এলাকায় জমায়েত হয়। এতে বংশাল ও পল্টনমুখী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীরা স্লোগানে বলেন, ‘শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘শপথ নিয়ে তালবাহানা চলবে না’, ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই।’

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও, গত ২৭ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়ে তাপসের জয় বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে। এরপরও তার শপথ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ সমর্থকরা আন্দোলনে নামেন।

নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন বিভাগীয় কার্যালয়ের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছেন ইশরাকপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ভবনে প্রবেশ করতে পারছেন না এবং নাগরিক সেবা কার্যক্রম পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৮ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি বর্তমানে আদালতের বিচারাধীন। এ পরিস্থিতিতে শপথ আয়োজন করা অনুচিত উল্লেখ করে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়।

জানা গেছে, আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ ২৮ এপ্রিল এক লিগ্যাল নোটিশে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায় ও ইসির গেজেটের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে শপথ বন্ধের দাবি জানান। তিনি হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিটে রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও করেছেন।

অন্যদিকে গত ১৭ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, “নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে মামলাটি হয়েছিল। তাপস প্রভাব খাটিয়ে তা থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। তখন আদালত ছিল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু আমরা সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রায় পেয়েছি। এখন রায় কার্যকর না করাটা আদালতের অবমাননার শামিল।”

বিক্ষোভকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ অবস্থায় নগর ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে পরাজিত করেন। তবে চলতি বছরের ২৭ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ওই ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে।