মূল ব্যবসায় ধস, ট্রেজারি আয়েই মুনাফা টিকিয়ে রেখেছে ব্যাংকগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ত্রৈমাসিকে দেশের তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মূল আয় উৎস নিট সুদের আয়ে ধারালো পতন দেখা গেছে। ঋণ পুনঃতফসিলের ব্যাপকতার কারণে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ থেকে আগের মতো সুদ আদায় করা সম্ভব হয়নি। তবে সরকারি ট্রেজারি বন্ড থেকে অর্জিত আয় ব্যাংকগুলোর মুনাফা ধরে রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
মোট ৩৬টি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে ১২টি তাদের ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১১টি ব্যাংকের পূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, ব্যাংক এশিয়া এখনও বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১১ ব্যাংকের মধ্যে ১০টির নিট সুদের আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, মাত্র উত্তরা ব্যাংক এই খাতে ৩৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি দেখিয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের নিট সুদের আয় সবচেয়ে বেশি ৭২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকেও নিট সুদের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
তবে মুনাফার দিক থেকে ব্র্যাক ব্যাংক শীর্ষে থেকে ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা ৪৮৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একই সময়ে উত্তরা ব্যাংকের মুনাফা ১১৪ শতাংশ বেড়ে ১২০ কোটি টাকা হয়েছে। এনসিসি, প্রাইম, পূবালী, যমুনা ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকগুলোও বছরের প্রথম প্রান্তিকে লাভ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মুনাফা ৩১ শতাংশ কমে ৮৮ কোটি টাকা এবং সিটি ব্যাংকের মুনাফা অপরিবর্তিত থেকে ৯২ কোটি টাকা হয়েছে।
ঋণের মানহীনতার কারণে ‘সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট’ নীতিমালা অনুসারে শ্রেণিকৃত ও পুনঃতফসিলকৃত ঋণ থেকে আদায়কৃত সুদ আয়ের মধ্যে গণনা হয় না। এর ফলে ব্যাংকগুলোর সুদের প্রকৃত আয় প্রতিবেদন থেকে বাদ পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৫৬,৫৮২ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে, যার প্রায় অর্ধেক অংশ শেষ তিন মাসে হয়েছে। ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালা শিথিল থাকায় ঋণের শ্রেণিকৃত পরিমাণ বেড়ে ৩.৪৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা গত বছর থেকে ২ লাখ কোটি টাকা বেশি।
অপরদিকে, আমানতের গড় সুদের হার মার্চ শেষে ৬.১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১.২৫ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি। ঋণের গড় সুদের হার বেড়ে ১২.০৪ শতাংশ হয়েছে।
ঋণ বিতরণে মন্দার কারণে ব্যাংকগুলো ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বড় পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। ট্রেজারি বন্ড থেকে পাওয়া ভালো রিটার্ন ব্যাংকগুলোর মোট মুনাফা বাড়াতে সহায়তা করেছে। তবে মূল ব্যবসায় আয়ের প্রবল হ্রাস এবং ঋণের মানহীনতার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকিং খাতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই বিভাগের আরও খবর

মার্চে বাড়তি ২৫ হাজার কোটি টাকা তুলেছেন গ্রাহকরা

সবজির দাম কিছুটা কম, বাজারে নেই ক্রেতা

ভোগান্তির শেষ নেই এটিএমে টাকার সংকট, বুথে বুথে ঘুরছেন গ্রাহক

জিআই পণ্য জামদানি শাড়ির দাম দিন দিন কেন বাড়ছে?

সরকার ১১ মাসে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা
