পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ছাড়া সামগ্রিক অর্থনীতি এগোবে না: ড. আনিসুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজার শক্তিশালী না হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রগতি সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি বলেন, “ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ না হলে আমাদের অর্থনীতির একটা অংশ পিছিয়ে যাবে অর্থাৎ সামগ্রিক উন্নতি হবে না। এখন পর্যন্ত কি হয়নি সেটা না ভেবে কতদূর এগিয়েছি, আরও কতখানি গেলে আমরা সবাইকে নিয়ে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব সেটা ভাবতে হবে।”
বুধবার (৭ মে) চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লুতে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান সংকট, সম্ভাবনা এবং উন্নয়নের পথ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “সংস্কার চলমান এবং আজকের এই আলোচনা তারই অংশ। একটি দেশ ও তার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়িক কমিউনিটির বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য স্থির রেখে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হবে, আর সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।”
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ও মতামত তুলে ধরা হয়। এসবের মধ্যে ছিল—ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, নীতিমালার সংস্কার, প্রয়োজনে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (FDI) সহজ করা, বিদেশি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পদ্ধতি সরলীকরণ, এবং ভালো সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনা।
এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জ, রেগুলেটরি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের এক প্ল্যাটফর্মে কাজ করার আহ্বান জানানো হয় যেন মৌলিক বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “কমপ্লায়েন্স এমনভাবে কার্যকর করতে হবে যেন প্রক্রিয়াকে ঠিক রেখে প্রতিটি কাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন হয়। ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, তখন অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।”
পুঁজিবাজারকে আরও প্রাণবন্ত করতে প্রোডাক্ট বৈচিত্র্য, অংশগ্রহণকারীদের সুযোগ বৃদ্ধি এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর তাগিদও দেওয়া হয়। জানা যায়, ইতোমধ্যে সিএসই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপনে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করেছে, যেখানে ব্যবসায়িক কমিউনিটিও যুক্ত ছিল। তবে এখনও এক্সচেঞ্জটি চালু হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়, কারণ এটি অর্থনীতির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সভায় আরও আলোচিত হয় ডেরিভেটিভস মার্কেট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, কর কাঠামো, নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “সব সমস্যাকে আলাদা করে দেখলে একরকম মনে হয়, কিন্তু সম্মিলিতভাবে বিবেচনা করলে অনেক বিষয়ে একসাথে কাজ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সিএসই’র উদ্যোগে কমোডিটি মার্কেট নিয়ে যে কাজ হয়েছে, বিশেষ করে রিয়েল টাইম রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা, তা প্রশংসার দাবি রাখে। বিএসইসিও এতে সন্তুষ্ট।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি’র কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, সিএসই’র চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, পরিচালক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, শাহজাদা মাহমুদ চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার।
এছাড়া টিকে গ্রুপ, বিএসআরএম, কেডিএস, ফারুক গ্রুপ, দৈনিক আজাদি, নাহার এগ্রো কমপ্লেক্স, খাতুনগঞ্জ চেম্বার, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল, বিএসএ অ্যাপারেলস, দি লাকি অ্যাপারেলস এবং এপিক প্রপারটিজসহ ১১টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা মতবিনিময়ে অংশ নেন।
শেষে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “আপনাদের মতামত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, এই আলোচনা ও প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটি কার্যকর পথ বের করা সম্ভব হবে।”
এই বিভাগের আরও খবর

আমার পদত্যাগের গুজবে কি শেয়ারবাজারে প্রভাব পড়ে না? — বিএসইসি চেয়ারম্যানের প্রশ্ন

সূচকের ওঠানামায় লেনদেন চলমান

বোনাস লভ্যাংশ প্রদানে বিএসইসির সম্মতি পায়নি অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স

প্রাইম ফাইন্যান্সের লোকসান কমেছে

অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ, তবে কি পদত্যাগ করছেন রাশেদ মাকসুদ?
