সরকার ১১ মাসে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা

সরকার ১১ মাসে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই থেকে মে পর্যন্ত) সরকার তপশিলভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ অঙ্কটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি।

 

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১২ মে পর্যন্ত সরকার তপশিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর কাছে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এক বছর আগের একই সময়ে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।

 

তবে একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া আগের ৪৯ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার। ফলে চলতি অর্থবছরে নিট বা প্রকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারের মোট ঋণ প্রায় ৩২ শতাংশ কমে এসেছে—২০২৪ সালের জুনে যা ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, এখন তা কমে হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।

 

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি, বাজেট ঘাটতি পূরণ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের ব্যাংকঋণ গ্রহণ বাড়ছে। একইসঙ্গে কড়াকড়ি আর্থিক নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ কমিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে, যার ফলে মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এসেছে।

 

বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানান, এই লক্ষ্যমাত্রা আরও কমিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরবর্তী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ আরও কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কম।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে দেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, ব্যাংক ঋণ মূল্যস্ফীতির একটি অন্যতম কারণ। তবে তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারের হাতে তেমন বিকল্প নেই।

 

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় ও কিছু দুর্বল ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের টাকা স্থানান্তরের কারণে তুলনামূলক স্থিতিশীল ব্যাংকগুলোর হাতে অতিরিক্ত অর্থ জমেছে। ফলে তারা সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেগুলো ঝুঁকিমুক্ত এবং লাভজনক বলে বিবেচিত হচ্ছে।

 

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার যদি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এই ঋণ না নিত, তবে টাকার অতিরিক্ত প্রবাহে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারত। তাই এই ধরনের ঋণগ্রহণ একধরনের কৌশলগত সমন্বয়ের নির্দেশক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।