শ্রমিক মুক্ত প্রতিষ্ঠান হতে আবেদন
শ্রমিকদের নিকট এমজেএল’র দায় ১০৯ কোটি টাকা
শাহ আলম নূর : শ্রমিক মুক্ত প্রতিষ্ঠান হতে চায় এমজেএল বাংলাদেশ লি:। তবে হায়াইট কালার বা শ্রমিক মুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগে প্রতিষ্ঠনটির নিকট ওয়ার্কাস প্রফিট পারটিসিপেশন ফান্ড’র (ডব্লিউপিপিএফ) ১০৯ টাকা দায় রয়েছে এব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এমজেএল বাংলাদেশ লি: দেশের অন্যতম শীর্ষ লুব্রিকেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির কাছে এর কর্মচারীদের পাওয়না ১০৯ কোটি টাকা।
একটি নিরীক্ষকের রিপোর্ট অনুসারে, প্রতিষ্ঠনটি ওয়ার্কাস প্রফিট পারটিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এধরনের ফান্ড গঠনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এমজেএল এমন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমজেএল’র শ্রমিকদের নিকট ২০২১-২২ অর্থবছরে আনুষঙ্গিক দায় ছিল ১০.৭৫ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তুত করা আর্থিক প্রতিবেদন পরিদর্শনকারী অডিট প্রতিষ্টানের তথ্যনুসারে কর্মীদের জন্য মুনাফা ভাগাভাগি তহবিল বা ডব্লিউপিপিএফ গঠনে কোম্পানির ব্যর্থতার ফলে চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুন পর্যন্ত মোট দায় দাঁড়িয়েছে ১০৯.৩৯ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব এদ্বায় অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অডিটর বলছে, “আমরা আর্থিক প্রতিবেদন’র নোট ২.৮ এর ৩৮ আর্থিক বিবৃতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যে অনুসারে কোম্পানিটি শ্রমিকদের লাভের অংশগ্রহণ তহবিলের জন্য প্রযোজ্যতার বিষয়ে আইনি মতামত দিয়েছে।
দেশের শ্রম আইনে প্রত্যেক কোম্পানিকে তার নিট লাভের ৫ শতাংশ ডব্লিউপিপিএফ স্কিমের অধীনে কর্মীদের সাথে ভাগ করে নিতে হবে। এমজেএল বাংলাদেশ লি: ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০.৭৫ কোটি টাকা ডব্লিউপিপিএফ এর ফান্ডে জমা করতে ব্যার্থ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে।এভাবে ডব্লিউপিপিএফ এর ফান্ডে অপরিশোধিত দায় দাঁড়িয়েছে ১০৯.৩৯ কোটি টাকা।
নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুসারে, এমজেএল বাংলাদেশ লি: লাভ বন্টন তহবিলের জন্য কোনো বিধান রাখেনি। বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৩, অধ্যায় এক্সভি এবং ২৩২ ধারার অধীনে অপরিহার্য। এমজেএল বাংলাদেশ লি: ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৪৯ কোটি টাকা মুনাফা করলেও ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২০১.৪৫ কোটি টাকায় নিট মুনাফা করেছে। অর্থাৎ এক বছরে প্রতিষ্ঠনটির মুনাফ করেছে ১৫.৫৩ শতাংশ।
২০২১-০২২ অর্থ বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি একত্রিত আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৬.৩৬ টাকা। এক বছর আগের ইপিএস ছিল ৭.৫৩ টাকা।
এমজেএল বাংলাদেশ লি: এর কোম্পানির সেক্রেটারি রাকিবুল কবির বলেন, আমাদের এখানে কোন শ্রমিক নেই। আমরা শ্রমিক মুক্ত হোয়াইট কালার প্রতিষ্ঠান হতে আবেদন করেছি। আসলে আমাদের কোন শ্রমিকের দরকার হয় না। আমাদের পণ্যগুলো অন্য প্রতিষ্ঠানে তৈরি করে থাকি। আমরা বাজারজাত করতে ভুমিকা পালন করে থাকি।
হোয়াইট কালার প্রতিষ্ঠান হলেও এর আগে শ্রমিকদের যে টাকা অপরিশোধিত রয়েছে সেই টাকার কি হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং ব্যবসার ক্রমবর্ধমান ব্যয় তার আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খেয়ে ফেলেছে। এতে এটি ২০২১-২২ অর্থবছরে নিট মুনাফা হ্রাস পেয়েছে।
এমজেএল বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরস ২০২১-২২ অথ বছরের জন্য ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে। এর আগের বছর প্রতিষ্ঠনটি ৫৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।
এমজেএল বাংলাদেশ ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগ।
মবিল কর্পোরেশন, পরে এক্সন মবিল কর্পোরেশন নামে পরিচিত, ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সাথে অংশীদারিত্বে মবিল যমুনা লুব্রিকেন্টস লিমিটেড প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। এর যাত্রার সাথে সাথে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের লুব্রিকেন্টে’র যাত্রা শুরু হয়। এর আগে, কোম্পানির বোর্ড ৭৫.০০ মিলিয়ন ডলারে একটি নবনির্মিত এফরামাক্স তেল ট্যাঙ্কার কেনার অনুমোদন দিয়েছে। এমজেএল বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫.২৮ টাকা শেয়ার প্রতি সমন্বিত নেট অপারেটিং নগদ প্রবাহ রিপোর্ট করেছে যা আগের অর্থবছরে ৮.২৪ টাকা ছিল।
কোম্পানিটি ২০১১ সালে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এমজেএল বাংলাদেশের শেয়ার .৫৭ শতাংশ বেড়ে ৮৭.৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কোম্পানির স্পনসর-পরিচালকরা কোম্পানিতে ৭১.৫২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে, যখন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মালিকানা ২১.৪৯ শতাংশ, বিদেশিদের ০.১৫ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডারদের ৬.৮৪ শতাংশ।