আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

৯ মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি বেড়েছে ৪৩১১ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় (এনবিএফআইএস) ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-এর সেপ্টেম্বের শেষে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, নানা অনিয়ম ও অনৈতিক পন্থায় নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফআইএস।

এছাড়া করোনার কারণে দুই বছর গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে নানা সুবিধা পেয়েছিলেন। চলতি বছরেও নতুন করে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভাবনা ছিল, ঋণ পরিশোধ না করলেও চলবে। আর এমন সব কারণে ব্যাংক খাতের মতো এ সেক্টরেও খেলাপি ঋণ দিন দিন বেড়েই চলছে।

বাংলাদেশ ব্যংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, খেলাপি ঋণ কমাতে বা আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখনই আরও কঠোর হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর না হলে এ খাতের খেলাপি ঋণ দিন দিন আরও বাড়বে। পাশাপাশি নতুন নতুন ছাড় দেওয়ার সিস্টেমও বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এনবিএফআইগুলোর মোট বিতরণকৃত ঋণ ৭০ হাজার ৪১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এসব ঋণের মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি ১০ লাখ, যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ঋণ ৪ হাজার ৩১১ কোটি টাকা।

২০২২ সালের জুন শেষে এনবিএফআইগুলোর মোট বিতরণকৃত ঋণ ছিল ৬৯ হাজার ৩১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৩৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেড়েছে।

আর চলতি বছরের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ৯৪ কোটি ৩ লাখ টাকা।

২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ ছিল ১০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। তিন মাস পর জুন শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২৫ কোটি টাকা কমে ১০ হাজার ৩২৮ কোটি টাকায়। সেপ্টেম্বর (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বেড়ে হয় ১১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। গত বছর ডিসেম্বর (অক্টোব-ডিসেম্বর) শেষে খেলাপি ঋণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় এক হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বেড়ে হয় ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বিতরণকৃত এসব ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা খেলাপি হয়ে পড়ে, যা ব্যাংক খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

গত জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ওই সময়ে বিতরণকৃত মোট ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ ছিল খেলাপি। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ৯ হাজার ১৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে খেলাপি। আর গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী ৯ মাসে খেলাপি বেড়েছে ৩১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.