ডি-লিস্টিংয়ের দিকে যাচ্ছে মিথুন নিটিং
শাহ আলম নূর : পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিলিস্টিংয়ের দিকে যাচ্ছে মিথুন নিটিং। কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকা মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইংকে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করা ছাড়া কোনো বিকল্প দেখছে না বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
শ্রমিকদের মজুরি সহ তারা কিছু ঋণ পরিশোধ করতে চলতি বছর বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) একটি নিলামে কোম্পানির যন্ত্রপাতি সহ সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছে।
১৯৯৪ সালে স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি, যা পরে টয়ো নিটেক্স লিমিটেড নামকরণ করা হয়। সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে উৎপাদনের বাইরে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
১৯ সেপ্টেম্বর বিএসইসি কোম্পানির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তার অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটি এখনও তাদের ফলাফল এবং সুপারিশ কমিশনে জমা দেয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, “এখন কোম্পানিটি শুধু কাগজে-কলমে বিদ্যমান। বিক্রির জন্য কোনো অবশিষ্ট সম্পদ নেই। কোম্পানির এখন শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।” তিনি এর ভয়াবহ অবস্থার জন্য কোম্পানির মালিকদের অবহেলাকে দায়ী করেন।
প্রতিষ্ঠানটি অ্যাকর্ডের প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলি সম্পাদন করেনি। বাংলাদেশের সমস্ত পোশাক কারখানাকে নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে পরিণত করার জন্য পরিকল্পনা করে। তবে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলস্বরূপ, বিদেশী ক্রেতারা অর্ডার দেওয়া বন্ধ করে দেন।
এরপর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল এবং প্লট ইজারার কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, বেপজা মিথুন নিটিং-এ সমস্ত পরিষেবা বন্ধ করে মালিকদের কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য করেন।
বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির এই ভঙ্গুর অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না কারণ এটি সময়মতো মূল্য-সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি।
বেপজার ছাড়পত্র ছাড়াই কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এমনকি কারখানা বিক্রির সময় বিএসইসিকেও জানায়নি।
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) কারখানাটি ২০১৭ সাল থেকে লোকসানের মধ্যে রয়েছে। বেপজা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
কারখানা বিক্রির বিষয়ে সিইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মফিজউদ্দিন বিন মেজবা বলেন, বেপজা একটি কোম্পানিকে বিক্রি করে তখনই, যখন তারা লোকসানের মধ্যে থাকে এবং মজুরি ও অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়।
“মিথুন নিটিং-এর ক্ষেত্রে বেপজা সেটাই করেছে। কারখানাটি কয়েক মাস আগে বিক্রি হয়েছে। হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে,” বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, কারখানা বিক্রির টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে।
“যেহেতু কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে বেপজার অনুমতি চাওয়া হয়নি, তাই কারখানা বিক্রির বিষয়ে নিয়ন্ত্রককে জানানোর প্রয়োজন ছিল না,” তিনি যোগ করেন।
যখন নিলামের প্রস্তুতি চলছিল, তখন এর ১০ টাকার শেয়ার ১৮.৮০ টাকায় লেনদেন হয়েছিল, যা এখন ফ্লোর প্রাইসের মধ্যে আটকে আছে।
মিথুন নিটিং এর অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩২.৪৯ কোটি টাকা। এর শেয়ার সংখ্যা প্রায় ৩.২৫ কোটি। স্পন্সর-পরিচালকরা ১৭.২০%, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিদের ১৭.০২% এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৬৫.৭৮% কোম্পানির শেয়ার রয়েছে।
১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় মিথুন নিটিং। ৮০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা এই কোম্পানি সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ বোনাস দেয়। এরপর আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারদর ক্রমাগত কমতে কমতে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ৫ টাকা ৯০ পয়সায় নেমে আসে। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল দাম ছিল ৭ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর থেকে অকারণে দাম বাড়তে থাকে। গত ৩ সেপ্টেম্বর একপর্যায়ে দাঁড়ায় ২৬ টাকা ৩০ পয়সায়।
এরপর থেকে আবার কমতে থাকে দাম। গত ২১ অক্টোবর দাম কমে ১৪ টাকা ২০ পয়সায় নেমে আসে। চার কর্মদিবস পর দাম বেড়ে হয় ১৬ টাকা ৩০ পয়সা।
মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি।
পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা লোকসান করে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালে লোকসান আরও বেড়ে হয় ৭ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চে তৃতীয় প্রান্তিকের যে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তাতে কোম্পানিটির লোকসান দেখানো হয় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এরপর আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশই করা হয়নি।