আজ: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৮ জানুয়ারী ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

নতুন স্পন্সরদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ শেয়ার ইস্যু করবে এমারেল্ড অয়েল

শাহ আলম নূর : এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ তার নতুন স্পন্সর পরিচালকদের জন্য বাজার মূল্যের এক-তৃতীয়াংশে শেয়ার ইস্যু করবে। বিনিয়োগের বিপরীতে প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে নতুন শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে তিনগুণেরও বেশি দামে লেনদেন হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপটি শেয়ারহোল্ডারদের বঞ্চিত করবে। তবে নতুন শেয়ারগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লক ইন থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে অতিরিক্ত সাধারণ সভায় (ইজিএম) নতুন শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ইজিএম’র সিদ্ধান্ত অনুসারে, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ ৩.৬২ কোটি নতুন শেয়ার ইস্যু করবে। যা বিদ্যমান শেয়ারের প্রায় অর্ধেক। মিনোরি বাংলাদেশের পক্ষে নতুন বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির বোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করারও অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এখন নতুন শেয়ার ইস্যু করার অনুমোদন চেয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’র (বিএসইসি) কাছে আবেদন করবে। নতুন শেয়ারের লকইন মেয়াদ নির্ধারণ করবে কমিশন।

বুধবার এমারল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২ টাকা ২০ পয়সায়। ২০২১ সালে জাপানি ফার্মিং কোম্পানি মিনোরি কো: লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ ৪০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করে কোম্পানিটিকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে বিএসইসি’র অনুমোদন পায়।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি রাইস ব্র্যান অয়েল “স্পন্দন” উৎপাদন করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের জন্য উৎপাদনের বাইরে ছিল। কারণ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

যদিও নতুন জারি করা শেয়ারের জন্য লকইন’র সময় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে সন্দেহ। একটি মামলাকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশির্বাদ নিয়ে স্পন্সর পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেন।

প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে, পেপার প্রসেসিং এবং প্যাকেজিং মুভ এর মাধ্যমে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে স্টক এক্সচেঞ্জের মুল বোর্ডে চলে যায়।

কোম্পানিটিকে তখন শর্ত দেওয়া হয়েছিল যে তার পৃষ্ঠপোষক পরিচালকরা তিন বছরের জন্য তাদের শেয়ার বিক্রি করবেন না। কিন্তু ঋণ পরিশোধের নামে বিএসইসি তাদের স্পন্সর পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির অনুমতি দেয়। এরপর কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ১৫ কোটি টাকায় শেয়ার বিক্রি করেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেন “কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ কম। নিট সম্পদের মূল্যও ঋণাত্মক। ফলে সম্পদের তুলনায় ঋণ অনেক বেশি। তাই ১০ টাকায় শেয়ার ইস্যু করা যৌক্তিক। এজন্য শেয়ারহোল্ডাররা তাদের সম্মতি দিয়েছেন। এখন কমিশনের কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হবে। তারা বলছেন “কোম্পানির কিছুই ছিল না। বিদ্যমান মেশিনগুলি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলস্বরূপ, কোম্পানিটি মেরামত এবং নতুন মেশিন সংযোজনের মাধ্যমে উৎপাদনে ফিরে এসেছে।”

যদিও একটি কোম্পানিকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার সময় মূল পৃষ্ঠপোষকদের শেয়ার পাওয়ার কথা, কিন্তু এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।

কোম্পানি সূত্র জানায়, কমিশনের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বিলুপ্ত কোম্পানিটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে মিনোরি বাংলাদেশ প্রায় ৩১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। মিনোরি বাংলাদেশ সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে প্রায় ৪৬.৬৬ লাখ শেয়ার কিনেছে, যা এমারেল্ড অয়েলের মোট শেয়ারের ৭.৮১%।

কোম্পানির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিবের ২১.৪১% শেয়ার রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৮% ব্যাংকের কাছে বন্ধক রয়েছে। ব্যাংক এশিয়া ও বেসিক ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি।

ঋণ পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংকগুলো মূল স্পন্সরের বন্ধক রাখা শেয়ার ফেরত দিতে ইচ্ছুক নয়। ফলে সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিবের শেয়ার পাচ্ছে না মিনোরি বাংলাদেশ।

গ্যাস সংকটের কারণে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে যেতে পারেনি কোম্পানিটি। এটি এখন স্পন্দন ব্র্যান্ডের তেলের সাথে ডি-অয়েলড রাইস ব্রান (ডরব) উৎপাদন করছে।
ইজিএমে এমারেল্ড অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে কোম্পানিটি উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ায় সব সুযোগ-সুবিধা অনিরাপদ হয়ে পড়ে। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর কোম্পানিটি খেলাপি হয়ে পড়ে।

“২০১৬ সালের অডিট রিপোর্টে দেখানো অ্যাকাউন্টের প্রাপ্য প্রমাণ আমরা পাইনি। এছাড়াও, কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স পাওয়া যায়নি।” কোম্পানির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কর্মকর্তারা বলেন, ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার বকেয়া বিল পরিশোধের পর গ্যাস সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে গ্যাস সংকটের কারণে বিকল্প হিসেবে এলপিজি স্টেশন ও ডিজেল বার্নার স্থাপন করা হয়েছে।

“এলপিজি এবং ডিজেল বার্নারের দাম বেশি হওয়ায় একটি তুষের আগুনে চালিত বয়লার এবং একটি ৭৫০ কেভি পাওয়ার স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে। মাইনোরি এখন পর্যন্ত ৩১.৫৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, প্রয়োজনে এটি আরও বিনিয়োগ করবে।

২০০৮ সালে কাজ শুরু করে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১১ সালে স্পন্দন ব্র্যান্ড রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন শুরু করে এবং ২০১৪ সালে বাজারে প্রবেশ করে। এমারেল্ড অয়েল ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে।

দীর্ঘ দিন লোকসান থাকা ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ায় কোম্পানিটিকে ২০১৮ সাল থেকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সর্বশেষ শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। এরপর থেকেই কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে এমারেল্ড অয়েলের ৭.৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসে মিনোরি বাংলাদেশ। মালিকানায় পরিবর্তন আসলেও পণ্য হিসেবে ব্র্যান্ড “স্পন্দন” নামেই তেল বাজারজাত করছে কোম্পানিটি।

ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের নতুন মালিকানায় কোম্পানিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ধানের কুঁড়া থেকে ভোজ্যতেল বাজারজাত শুরু করে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকার। আর পরিশোধিত মূলধন ৫৯ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩৮.২৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৬.৮৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫৪.৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.