মার্কিন ব্যাংক খাতে বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারেও
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কভিড মহামারীর ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার। কিন্তু গত কয়েক দিনে ব্যাংক খাতে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তার প্রভাব এড়ানো পুঁজিবাজারের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) কঠোর নীতি পরিস্থিতি সামলাতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে তা দেখার বিষয়। খবর রয়টার্স।
গত সপ্তাহে বিপর্যয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক। ১৬০ বছর পুরনো সুইস ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে উদ্ধার করে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএস। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ২০০৮ সালের পরিস্থিতি এড়ানো গেলেও ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলের আর্থিক খাতে তার প্রভাব অনুভূত হয়।
এক বছর ধরে ফেড যেভাবে সুদহার বাড়ানোর পথে এগিয়েছে তাতে সমস্যার সুরাহা না হয়ে বরং ফাঁকফোকর আরো দৃশ্যমান হয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। ব্ল্যাকরকের গ্লোবাল চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ওয়েই লি বলেন, ‘এ মুহূর্তে পুঁজিবাজারের অবস্থা বেশ নাজুক। বিনিয়োগকারীরা সতর্ক পথে এগোচ্ছেন এবং বাজারের উত্থান-পতনে গভীর দৃষ্টি রাখছেন। কারণটা সহজেই অনুমেয়, বাজারে অস্থিরতা যে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি তা একেবারে স্পষ্ট।’
গত কয়েক দিনে জার্মান জায়ান্ট ডয়েচে ব্যাংকের দিকে দৃষ্টি ছিল বিনিয়োগকারীদের। চলতি মাসে পুঁজিবাজারে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মূল্য হারিয়েছে ডয়েচে ব্যাংক। এর মধ্যে গত শুক্রবারেই শেয়ারদরে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ পতন হয়েছে।
বর্তমান সংকটের সঙ্গে অনেকে ২০০৮ সালে লেহম্যান ব্রাদার্স বিপর্যয়ের মিল পাচ্ছেন। তখনো বেশ কয়েকটি বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারি বেইলআউটে টিকে গিয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা, মার্কিন ও ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকরা যদি সঞ্চয়কারীদের সুরক্ষা না দেন তাহলে আরেক দফা আমানতকারীদের অর্থ তুলে নেয়ার প্রবনতা শুরু হতে পারে। ফেডের মতিগতি নিয়ে অনিশ্চয়তা পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বাড়িয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বন্ডের মূল্যে বড় আকারের উত্থান-পতন চলছে।
গত বুধবার বেঞ্চমার্ক সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দেয় ফেড। একই সঙ্গে আরো ইঙ্গিত দেয়, সামনের দিনগুলোয় সুদহার আরো বাড়তে পারে। এতে চলতি সপ্তাহে দুই বছর মেয়াদি ইউএস ট্রেজারিজের ইল্ড ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির পর সর্বনিম্ন।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন ট্রাস্টের মুখ্য বিনিয়োগ কর্মকর্তা ক্যাটি নিক্সন বলেন, ‘আর্থিক খাতে বড় আকারের বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েসয়ে এগোবে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। আমানতকারীদের মধ্যে আবারো অর্থ তুলে নেয়ার প্রবনতা শুরু হয় কিনা সে আশঙ্কা প্রশমিত করতে ফেড বা অর্থ মন্ত্রণালয় যতক্ষণ পর্যন্ত না যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ কৌশলে এগোবে তারা।’
প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটির এ শীর্ষ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এখন আসলে বাজারে আস্থার সংকট বিরাজ করছে। প্রত্যেকেই সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন।’