জেড ক্যাটাগরি ও ফ্লোর প্রাইস নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি
খালিদ হাসান: গুজবের হাত থেকে কোনো ক্রমেই রেহাই পাচ্ছে না পুঁজিবাজার। বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজার নিয়ে একধরণের অসাধু চক্র নানা ধরনের গুজব রটায়। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে বিভিন্ন দূবর্ল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে থাকে। এসব অসাধু চক্র নিজেদের স্বার্থে পুঁজিবাজার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে। যা ফলে এসব মিথ্যা তথ্য বা গুজব বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ ধরণের মিথ্যা তথ্যে বেশির ভাগ প্রভাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সম্প্রতি একটি মহল সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা গুজব রটাচ্ছে। আর এ গুজবকে কেন্দ্র করেই গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সূচকে বড় পতন ঘটেছে।
বেশ কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করে গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, ১০ মার্চ থেকে নতুন করে আরোও কয়েকটি কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হচ্ছে এবং বেক্সিমকোসহ আরো কয়েকটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস রোববার থেকে উঠে যাচ্ছে। এমন গুজবে বাজারে বড় পতন ঘটে। যায় ফলে গত ৭ মার্চ সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজারে সূচকের বড় পতন হয়। এবং তিন শতাধিক কোম্পানির দর পতন হয়।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পক্ষ থেকে এধরণের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিশন।
গুজব বা ভিত্তিহীন এ ধরনের তথ্যে প্রভাবিত না হয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, জেড ক্যাটাগরিতে নতুন করে কোনো কোম্পানি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। পাশাপাশি নতুন কোনো কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ও সিদ্ধান্ত কমিশন নেয়নি। কিন্ত হঠাৎ করে একটি মহল বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনোবল ভেঙ্গে দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এদের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। কোনো রকম সত্যতা যাচাই বাছাই ছাড়াই তারা তাদের শেয়ারগুলো লসে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর কারসাজি মহল এ সুযোগে ফায়দা লুটে শেয়ারগুলো লুফে নিচ্ছে। আর এসব কারনে বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। গুজব বা ভিত্তিহীন তথ্যে বিনিয়োগকারীদের কান দেওয়া উচিত হবে না বলে জানান তিনি।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘নতুন করে আর কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করার এ ছাড়া নতুন কোনো কোম্পানির শেয়ার ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। বিএসইসির সর্বশেষ আদেশ অনুযায়ী যেসব কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহার করা হয়েছে তার বাইরে আর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, ‘আগামী রোববার থেকে নতুন করে কোনো কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হচ্ছে না। নতুন কোনো কোম্পানির শেয়ার ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলেও বিএসইসির কাছ থেকে নির্দেশনা আসেনি।’
উল্লেখ, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে দর কমেছে তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ার দর। সেই সাথে লেনদেনও কমেছে।
বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১১২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৬ টির, দর কমেছে ৩০৪ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬ টির। আগের কার্যদিবস থেকে ২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা কমে ডিএসইতে ৭০৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৫৫০ পয়েন্টে। লেনদেন অংশ নেয়া ২৩৬ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৭০ টির এবং ২২ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।