আজ: শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার |

kidarkar

চলছে ভয়াবহ দরপতন

পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে কাজে আসছে না কোনো উদ্যোগ

খালিদ হাসান : ধারাবাহিক দরপতনে নুয়ে পড়েছে পুঁজিবাজার। দৈনন্দিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামই পড়তির দিকে। সাম্প্রতিক প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে শেয়ারের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রেও পাগলা ঘোড়ার মতোই অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এতে দৈনন্দিন লেনদেন ও সূচক উভয়ই অস্বাভাবিক গতিতে কমছে। এই প্রবণতা ধারাবাহিক চলতে থাকার কারণে পুঁজিবাজার ক্রমশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারী।

ঠেকানো যাচ্ছে না পর্দার অন্তরালে কোটারিগোষ্ঠীর নানা কারসাজি। কৌশলী প্রচারণার টোপ ফেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শেয়ার হাতবদলের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে গুটিকয়েক ব্যক্তির আখের গোছানো শেষ হয়ে গেলে ভয়াবহ দরপতনের মুখে পড়ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে নগদ অর্থ বিনিয়োগ করে কেউ পথে বসছেন, কেউ মার্জিন ঋণ নিয়ে আম-ছালা উভয়ই হারাচ্ছেন। কেউ আবার দাম বাড়বে আশায় দীর্ঘকাল অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

ঈদের আগে প্রায় আড়াই মাসের লাগাতার দরপতনে লাখ কোটি টাকার বেশি বাজার মূলধন কমে যায়। ঈদের ছুটি শেষেও একই চিত্র পুঁজিবাজারে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে চরম পর্যায়ের তারল্য সংকট । সুদের হার বেশি হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা সরকারি ট্রেজারি বিল, বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা এফডিআরে যাচ্ছেন।এসব বহুমুখী সংকটের প্রভাবে বাজার নুয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সংকট থেকে উত্তোরণে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশন বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে গতকাল বৈঠকে বসেন ।

বৈঠকে অংশীজনেরা বলেছেন, মার্জিন ঋণ সমস্যা বর্তমানে বাজারের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনার জন্য যত সহজে বিনিয়োগকারী ঋণ পান, অন্য কোনো ক্ষেত্রে এত সহজে ঋণ পাওয়া যায় না। ব্যাংক থেকে একটি ক্রেডিট কার্ড নিতেও নানা ধরনের কাগজপত্র ও যোগ্যতা লাগে। কিন্তু সেখানে পুঁজিবাজারে শতকোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয় বাছবিচার ছাড়াই। এতে বাজারে যখনই দরপতন শুরু হয়, তখনই ঋণ সমন্বয়ে ফোর্সড সেল বেড়ে যায়। এ সমস্যার সমাধান করা না হলে দীর্ঘ মেয়াদে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে না। এ কারণে মার্জিন ঋণনীতিতে আমূল পরিবর্তন দরকার বলে বৈঠকে একাধিক অংশীজন মত দেন।

বৈঠকে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন , পুঁজিবাজারের অংশীজন এবং ব্রোকাররা বাজারের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বাজার সংশ্লিষ্টদের মতামত গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করে থাকে এবং পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতামত ও পরামর্শ এর মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাই বিএসইসির লক্ষ্য।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিরি উত্তরণে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতামত ও পরামর্শ আমলে নিয়ে কাজ করবে বিএসইসি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আর্থিক অবস্থান যেমন উন্নতি হচ্ছে এবং দেশের পুঁজিবাজারও দ্রুতই প্রাণবন্ত ও বলিষ্ঠ রূপে ফিরবে বলে আশা করা যায়।

বৈঠকে বর্তমান সংকট থেকে উত্তোরণে প্রাথমিকভাবে তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এগুলো হলো- প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ডিলার একাউন্ট থেকে মার্কেটে সাপোর্ট দেওয়া, ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের সাথে বৈঠক করে বিনিয়োগ সক্রিয় করা এবং মিউচুয়াল ফান্ডকে শক্তিশালী করা। তবে এসব সিধান্তের কোনো সুফল নেই বাজারে। আজও বাজারে বড় দরপতন হয়েছে।কোনো উদ্যোগই যেন কাজে আসছে না পুঁজিবাজারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্থায়ী ভিত্তিতে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে পুঁজিবাজার দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হচ্ছে না । বাজার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। ভালো কোম্পানির অভাব দীর্ঘদিনের। সুশাসনেরও ঘাটতি তীব্র। পাশাপাশি শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া ঋণসুবিধা (মার্জিন ঋণ) বাজারের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে সুফল মিলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা ।

বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব মূল্যসূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। সেই সাথে ৩ শতাধিক কোম্পানির দর কমেছে। তবে টাকার অংকে বেড়েছে লেনদেনের পরিমান। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬৩৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৩৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৮০ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫০ টির, দর কমেছে ৩১০ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬ টির।

ডিএসইতে ৫৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৭৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৫৪ পয়েন্টে।

সিএসইতে ২১৫ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪৫ টির এবং ২৭ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

 

৪ উত্তর “পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে কাজে আসছে না কোনো উদ্যোগ”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.