আজ: শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ইং, ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার |

kidarkar

চীনা বিনিয়োগের জন্য সঠিক জায়গা বাংলাদেশ : বিএসইসি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক : চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। চীনা বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশই সঠিক জায়গা।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ‘দ্যা রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ সামিটে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে বেইজিংয়ের এক হোটেলে এই সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে আরও উপস্থিত আছেন উভয় দেশের সরকারের নীতিনির্ধারক এবং সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী এবং বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। স্বাগত বক্তব্যের পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর অডিও-ভিজুয়াল প্রদর্শিত হয়।

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম উক্ত অনুষ্ঠানে ‘দ্যা রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক উপস্থাপনা প্রদান করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে স্বাধীনতা লাভ এবং তার দেখানো সোনার বাংলার স্বপ্নের অনুসরণে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হওয়ার অভাবনীয় সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

এসময় দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং পারস্পারিক সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমদানি শুল্ক ছাড়, ১০০ শতাংশ বিদেশী মালিকানা, ৪০টি দেশের সাথে দ্বৈত কর চুক্তি, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা এবং পুঁজি ও মুনাফার সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসন সহ বহুবিধ প্রণোদনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি আরও বলেন, চীন ও বাংলাদেশ উভয়েই ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের প্রকল্পের জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। যা চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সুযোগগুলো কাজে লাগাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

বাংলাদেশে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বিকাশ লাভ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে কৃষি রপ্তানি চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হারে (সিএজিআর) ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবারে। ২০১৯-২০২৮ সালের মধ্যে কৃষি পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্পের রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য যথেষ্ট সুযোগ প্রদান করবে।

‘অন্যান্য প্রতিশ্রুতিশীল খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে পাট শিল্প, হালকা প্রকৌশল, বৈদ্যুতিক এবং সরঞ্জাম উত্পাদন, অটোমোবাইল শিল্প এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড তৈরি পোশাক খাত।’

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সহ বাংলাদেশ বিশ্বের ৮তম জনবহুল দেশ। দেশটি বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি, একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক জলবায়ু, কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থান এবং যুক্তিসঙ্গত মজুরির কারণে কম উৎপাদন খরচ থেকে উপকৃত হয়। এসব কারণ বাংলাদেশকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈশ্বিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা, অনুকূল আর্থিক ও রাজস্ব নীতি এবং বিনিয়োগ-বান্ধব সরকারের প্রতিশ্রুতি দেয়। দেশটি একটি সম্পদশালী সুনীল অর্থনীতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য অনুকূল সবুজ পরিবেশ।

তিনি ভূরাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ও সুবিধাজনক অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের তারুণ্যে উজ্জীবিত মানবসম্পদের সুযোগ-সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক সামষ্টিক ও অর্থনৈতিক নানা সূচকে যেমন- জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার, দারিদ্র্য হ্রাস, শিশুমৃত্যু হ্রাস, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, বৃহৎ দেশীয় বাজার, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, দক্ষ জনবল, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতিতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতির চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের দৃঢ় ও সম্ভাবনাময় অবস্থানের চিত্র তুলে ধরেন এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধান উৎস করার জন্য ক্রমাগত উন্নয়নের নিমিত্ত বিএসইসি কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধাজনক দিকসমূহ তুলে ধরে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডাররা অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীন এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা বক্তব্য দেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.