আজ: শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪ইং, ২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ অগাস্ট ২০২৪, সোমবার |

kidarkar

প্রশ্ন পুড়লেও উত্তরপত্র অক্ষত: বোর্ড চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে থানার মালখানায় রাখা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পুড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। ঠিক কতগুলো থানায় পরীক্ষার অতি গোপনীয় জিনিসপত্র পুড়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা জানাতে সব বোর্ডকে চিঠিও দেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির কাছে সব বোর্ড থেকে তথ্যও জানানো হয়েছে। তাতে ২৪টি থানায় থাকা প্রশ্নপত্র পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে উত্তরপত্র অক্ষত রয়েছে বলে দাবি করেছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

সোমবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে তিনি জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান। অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা সব বোর্ডকে চিঠি দিয়েছিলাম। তারা তথ্য পাঠিয়েছেন। আমাদের হাতে যে তথ্য এসেছে, তাতে মোট ২৪টি থানায় থাকা এইচএসসি পরীক্ষার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু প্রশ্নপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, এট ঠিক। কিন্তু কোথাও উত্তরপত্রটা পোড়েনি, সেগুলো অক্ষত আছে, ঠিক আছে।’

সহিংসতা শুরুর পর দ্বিতীয় কিস্তির লিখিত উত্তরপত্র স্ব স্ব বোর্ডে পাঠাতে নিষেধ করেছিল বোর্ড। সহিংসতা ও থানা অগ্নিসংযোগের সময় সেগুলো কোথায় ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেখানেই থাকুক, খাতাগুলো সেইফ (নিরাপদ) ছিল। শিক্ষার্থীদের লেখা খাতা ঠিক আছে। তাদের খাতা মূল্যায়ন করেই ফল তৈরি করা হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তারা যেন টেনশন না করে।’

এর আগে গত ৭ আগস্ট থানায় রাখা প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিয়ে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেখানে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা শাখার দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, তারা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে অনেক থানায় উত্তরপত্রও পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন। যদি উত্তরপত্র পুড়ে যায়, সেক্ষেত্রে ফলাফল তৈরি নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে বোর্ডকে।

তাছাড়া সহিংসতার পর অন্তত ৬০টি থানায় আগুন, লুটপাট বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। যদিও সব থানায় এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রসহ গোপনীয় মালামাল রাখা হয় না বলে জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।

আন্দোলনে অনেক পরীক্ষার্থী আহত হওয়া এবং প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র পুড়ে যাওয়ার খবরসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অটোপাস দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দাবি-দাওয়া জানিয়েছেন। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন বলেও খবর পেয়েছি। আজ তো তারা আমার বোর্ডেও চলে এসেছে। আন্দোলন করছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা অটোপাস চেয়েছে। আমরা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা কর্মকর্তারাতো এ সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এজন্য শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি জানিয়েছেন, সেগুলো চিঠি আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বোর্ডের এ চিঠির প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো।’

কিছু বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, কিছু বিষয় বাকি- এমন পরিস্থিতিতে অটোপাস দেওয়ার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আগে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখতে হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা বিষয়টি অবগত হয়েছে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নতুন সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অবগত। আমি এখানে নতুন এসেছি। শিক্ষা বোর্ড কী বলছে বা কী সমস্যা, সেটা শিক্ষা উপদেষ্টাকে অবগত করা হবে। যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, তা বোর্ডে জানানো হবে। বোর্ড সেই মোতাবেক কাজ করবে।’

গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।

সূচি অনুযায়ী, এখনও ১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা আটকে গেছে। যদিও প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৩টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এর মধ্যে বাধ্যতামূলক বাংলা ও ইংরেজির চারটি বিষয় (প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) এবং আইসিটি। ৮টি বিষয় ঐচ্ছিক (অপশনাল)।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.