শেয়ারবাজারে নীরব ‘রক্তক্ষরণ’
নিজস্ব প্রতিবেদক: দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজারে পতনের মাত্রা তত বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। রোববার (২০ অক্টোবার) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। এতে কমেছে মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে টানা ৫ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে ১১ কার্যদিবসই পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজর। বাজারের এই পরিস্থিতিকে নীরব ‘রক্তক্ষরণ’র সঙ্গে তুলনা করছে বিনিয়োগকারীরা।
তারা বলছেন, শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরতপন হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন এবং তাদের নীরব রক্তক্ষরণ হচ্ছে। পুঁজি হারানোর দুশ্চিন্তায় তারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। ফলে সংসারেও অশান্তি দেখা দিচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘শেয়ারবাজারে যে ভয়াবহ দরতপন হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। পোর্টফোলিওতে যে কয়টি শেয়ার কেনা আছে, প্রত্যেকটির দাম ৫০-৬০ শতাংশের ওপরে কমে গেছে। বিনিয়োগ করা পুঁজি অর্ধেক হয়ে গেছে, তারপরও দরপতন থামছে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আশায় থাকি শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি ভালো হবে। সকালে লেনদেনের শুরুতে বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকে, কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে আবার দরপতন শুরু হয়। প্রতিদিন বাজারে একই চিত্র দেখতে হচ্ছে। প্রতিদিন শেয়ারের দাম কমে লোকসান বাড়ছে, এটা দেখা ছাড়া আমাদের যেন আর কোনো উপায় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজারে যে হারে দরপতন হচ্ছে তাতে দিন দিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। খাওয়া-দাওয়ার ঠিক নেই। টেনশনে মন-মেজাজ সব সময় ভালো থাকে না। ফলে টুকিটাকি বিষয় নিয়ে সংসারের অশান্তি দেখা দেওয়া শুরু হয়েছে।’
মিজানুর রহমান নামের আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন কঠিন সময় পার করছেন। প্রতিদিন বিনিয়োগকারীদের লোকসান বাড়ছে। এ পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে থামবে বলা মুশকিল। যে হারে দরপতন হয়েছে, তাতে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ৪০-৫০ শতাংশ লোকসানে রয়েছে। এত লোকসানে শেয়ার বিক্রি করা সম্ভব না। আবার ধরে রেখে যারা বিক্রি করছেন না, তাদের লোকসান বেড়েই চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে প্রতিনিয়ত দরপতন হচ্ছে, কিন্তু বাজারকে এই পতনের বৃত্ত থেকে বের করে আনতে সংশ্লিষ্টদের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। দিন দিন শেয়ারবাজার রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে। দায়িত্বশীলদের উচিত শেয়ারবাজারের দিকে নজর দেওয়া। এভাবে চলতে থাকলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা থাকবে না।’
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুতে মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। তবে প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন পার হতেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমতে থাকে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে।
ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৫ পয়েন্টে নেমেছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩০৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৫৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
টাকার অংকে ডিএসইতে সব থেকে লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৪ কোটি ৫৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১৩ কোটি ৪৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এনআরবি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, অগ্নি সিস্টেম, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং গ্রামীণফোন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮১টির এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।