আজ: শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ইং, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার |

kidarkar

শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক ও এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিজের সাথে বৈঠক

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারলে কোনো সংস্কারই ফলপ্রসু হবে না : ডিএসই চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করনীয় নির্ধারণে শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক ও এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিজ-এর প্রতিনিধিগণের সাথে বৈঠক করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই।

গতকাল (২৮ অক্টোবর) সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনার শুরুতেই ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দূর্নীতি, বিচারহীনতা, নীতি অঙ্গতি ও ভুল সিদ্ধান্তের অনিবার্য কারণসরূপ বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আজ অত্যন্ত দূর্বল ভিত্তিতে অবস্থান করছে। বর্তমান বাজারে কাঠামোগত সংস্কার ও অনিয়ম দূরিকরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সকল বাজার মধ্যস্থতাকারীরা একযোগে কাজ করছে। কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারলে কোনো সংস্কারই ফলপ্রসু হবে না। স্বল্পমেয়াদে বাজারের আস্থা বৃদ্ধির জন্য আমাদের করণীয় কি রয়েছে, সে বিষয়েও একইসাথে কাজ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদে মার্কেটের আস্থা বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের এই মুহুর্তে কি করণীয় আছে সেগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

পরে মার্চেন্ট ব্যাংক ও এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিজ-এর প্রতিনিধিগণ বাজারের ওপর আস্থা, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, তারল্য সংকটের সমাধানে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল ব্যাংক কর্তৃক পুঁজিবাজারে এক্সপোজার বৃ্দ্ধি, ডাইরেক্ট লিস্টিং রুলস সংস্কার, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, সাপোর্ট ফান্ড সৃষ্টি, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, ইস্যুয়ার কোম্পানির জন্য প্রণোদনা, ডিএসই’র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করণ, ফ্লোর প্রাইসের মতো হটকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়া, ফিনান্সিয়াল রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্তি উন্নয়ন, মানসম্পন্ন আইপিও নিশ্চিতকরণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আইপিও কোটা বৃদ্ধি, পাবলিক ইস্যু রুলস এর সংস্কার, তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানির মনিটরিং জোরদারকরণ, মার্জিন রুলস সংস্কার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড রুলস এর সংস্কার, গবেষণা জোরদারকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, অতিরিক্ত তদারকি রহিতকরণ, পলিসিগত প্রতিবন্ধকতা দূরকরণ, এটিবি মার্কেট গতিশীল করা সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

পরিশেষে, ডিএস’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারকে দক্ষ, স্বচ্ছ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমানে একটি দুর্লভ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তন, অনিয়ম-দূর্নীতির তদন্ত ও বিচারের সাথে সাথে বিনিয়োগকারী এবং মধ্যস্থতাকারীদের আস্থা অর্জনে বাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ডিএসই বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে কিছু কাজ স্বল্পমেয়াদী। যেখানে প্রধান চ্যালেঞ্জ পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার করা। সেটির কয়েকটি ধাপ রয়েছে। একটি হলো নীতিগত সহায়তা বৃদ্ধি করা, এজন্য আমরা এনবিআর-এর সাথে যোগাযোগ করে পুঁজিবাজারের স্বার্থে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স, টার্নওভার ট্যাক্স হ্রাস করণসহ প্রাসঙ্গিক সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। আরেকটি হলো তারল্য সাপোর্ট। এজন্য আমাদের দেশীয় উৎসের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হবে৷ ব্যাংক খাতের মত পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাজার মধ্যস্থতাকারীরা যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একসাথে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে যেতে পারি, তবে আমাদের পলিসিগত সুবিধা পাওয়া সহজ হবে। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে আমাদের এক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিয়মিত গণসংযোগ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ডিএসই’র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মার্কেটের প্লোয়ারদের প্লে করতে দিতে হবে। যদি তারা কোন অনিয়ম করে তবে রেগুলেটর তাদের ধরবে। আমাদের মার্কেটের যে সমস্ত সংস্কার প্রয়োজন তা করার জন্য আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাব। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে রিসার্চবেসড কমিউনিকেশন বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় রুলস রেগুলেশন্স পরিবর্তন করার বিষয়ে আমরা কাজ করবো। বাজারের উন্নয়নের জন্য সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক, এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিজ এবং ডিবিএ একসাথে কাজ করে তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। একদিনে সব সমাধান করা সম্ভব হবে না। কিন্তু সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে সবাই একযোগে কাজ করলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় ।

এসময় ডিএসই’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) মেহাম্মদ কামরুজ্জামান, নাহিদ হোসেন, পিএইচডি, সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মোহাম্মদ ইশহাক মিয়া, শাহনাজ সুলতানা, মোঃ শাকিল রিজভী, শরীফ আনোয়ার হোসেন, রিচার্ড রি রোজারিও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাত্বিক আহমেদ শাহ। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন্স (বিএমবিএ) এর প্রেসিডেন্ট ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাজেদা খাতুন, বিএমবি’র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ রিয়াদ মতিন, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, এফসিএস, শান্তা এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএসইসি’র সাবেক কমিশনার আরিফ খান, ভ্যানগার্ড এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড-এর পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী সহ আরও অনেকে।

 

১ টি মতামত “বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারলে কোনো সংস্কারই ফলপ্রসু হবে না : ডিএসই চেয়ারম্যান”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.