আজ: শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ইং, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার |

kidarkar

শেষ মূহুর্তের প্রচারনায় ট্রাম্প- কমলা, দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অপেক্ষার পালা ফুরিয়ে আসছে। আজকের দিনটা পেরোতেই নিজেদের প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন মার্কিন নাগরিকরা। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস দুজনই দাঁড়িয়ে আছেন ইতিহাসের সামনে। ৫ নভেম্বর নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনকে সামনে রেখে শেষ হয়ে আসছে প্রচারণার দিনক্ষণ। তাই ভোটব্যাংক নিজের দিকে টেনে নেওয়ার শেষ সুযোগ হিসেবে প্রচারণায় ঘাম ঝরাচ্ছেন দুই প্রার্থীই।

রোববার (৩ নভেম্বর) শক্তিশালী স্যুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত মিশিগানে আরব আমেরিকানদের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন কমলা। আর ট্রাম্প গিয়েছিলেন আরেক সুইং স্টেট পেনসিলভেনিয়ায়। সেখানে সমাবেশে নির্বাচন ঘিরে ভুয়া সংবাদ সম্পর্কে সতর্ক করেন তিনি।

বিভিন্ন জনমত জরিপ বিশ্লেষণ করে এবারের মার্কিন নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেখা গেছে, বিভিন্ন স্টেটে নারীদের শক্তিশালী সমর্থন পাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তবে, সার্বিক বিচারে শেষ মুহূর্তেও কিঞ্চিৎ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্পই। খবর রয়টার্সের।

রয়টার্স/ইপসস জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্প-কমলা দুই প্রার্থীই নিরঙ্কুশ সমর্থন যোগাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবারের নির্বাচনে। ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব আছে দুজনকে নিয়েই। তবে, তাতে ভোটদানে কোনো ভাটা পড়েনি। বরং, এই শতাব্দীর সবচেয়ে বেশি ভোট কাস্টিংয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে এবারের মার্কিন নির্বাচনেই। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার ইলেকশন ল্যাব অনুসারে, ইতোমধ্যেই ৭৮ মিলিয়নেরও বেশি আমেরিকান আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০২০ সালে মিলিয়ে ভোট পড়েছিল ১৬০ মিলিয়ন।

রোববার শক্তিশালী স্যুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত মিশিগানের একটি ঐতিহাসিক কৃষ্ণাঙ্গ চার্চেও গিয়েছিলেন কমলা। ডেট্রয়েটের গ্রেটার ইমানুয়েল ইনস্টিটিউশনাল চার্চ অব গড ইন ক্রাইস্ট-এর প্যারিশনারদের তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমরা আমাদের জাতির ভাগ্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করব। সেজন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই শুধু প্রার্থনা করা যথেষ্ট নয়, শুধু কথা বলাও যথেষ্ট নয়।

পরে মিশিগানের ইস্ট ল্যানসিংয়ে একটি সমাবেশে প্রায় ২ লাখ আরব আমেরিকানদের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি যুদ্ধে বেসামরিক হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কমলা বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি গাজার যুদ্ধ শেষ করতে আমার সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব।

এ সময় গাজা ও লেবাননে হাজার হাজার বেসামরিক মৃত্যু ও লাখো মানুষের স্থানচ্যুতির জন্য ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন কমলা।

অন্যদিকে শেষদিন তিনটি সমাবেশ করেন ট্রাম্প। প্রথম সমাবেশে হ্যারিসের পক্ষে অগ্রগতি দেখানোয় জরিপগুলোর সমালোচনা করেন তিনি। ডেমোক্র্যাটদের ‘শয়তানি দল’ বলে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহাস করেন এবং আপেলের উচ্চমূল্যের বিষয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া ডেমোক্র্যাট্রদের সমর্থন দেওয়ার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর সমালোচনাও করেন তিনি।

জুলাইয়ে এই পেনসিলভেনিয়ার বাটলারেই সমাবেশকালে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন ট্রাম্প। রোববার প্রচারণার শেষদিনে সমর্থকদের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, তার চারপাশে বুলেটপ্রুফ কাচের ব্যবস্থায় ফাঁক ছিল। সংবাদমাধ্যমগুলোকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে আবারও গুলি করা হতে পারে। আর সেই গুলি আসতে পারে ভুয়া সংবাদের মাধ্যমে। তবে, আমি এটা নিয়ে খুব বেশি কিছু মনে করবো না।’

পরে নর্থ ক্যারোলিনার কিন্সটন এবং জর্জিয়ার ম্যাকনে গিয়েও ভাষণ দেন ট্রাম্প। সমাবেশে তিনি গত সপ্তাহের চাকরির প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলেন। বর্তমান সরকারের সমালোচনা বলা হয়েছে, মার্কিন অর্থনীতি গত মাসে মাত্র ১২ হাজার চাকরি তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনটি প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘অবক্ষয়িত জাতি’। এ অবস্থা জারি থাকলে ১৯২৯ সালের মহামন্দার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি!

মোটাদাগে এবারের নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের জন্য দেওয়া ট্রাম্প-কমলার মূল প্রতিশ্রুতিগুলো:

মূল্যস্ফীতি দমন

নির্বাচিত হলে প্রথম দিন থেকেই মার্কিন জনগণের জীবনযাত্রার খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। এক্ষেত্রে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রথমবারের মতো বাড়ি কেনার সুবিধা, আবাসনের ব্যবস্থা ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি।

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রাকে সাশ্রয়ী করার অঙ্গীকার করেছেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তেল উৎপাদন বাড়িয়ে জ্বালানির দাম কমানো হবে। যদিও সুদের হার কমানো এককভাবে প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণে নয়, তবুও তিনি এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে হ্যারিস তার দীর্ঘকালীন প্রসিকিউটরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যেখানে ট্রাম্প এরই মধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। অপরদিকে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে আমেরিকায় মাদক চক্র ও গ্যাং সহিংসতা দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী বা ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরের ‘বিপজ্জনক শত্রুদের’ মোকাবিলারও ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

গর্ভপাতের অধিকার

কমলা হ্যারিস নির্বাচনী প্রচারে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অঙ্গীকার গর্ভপাতের অধিকার। মূলত এই একটি প্রতিশ্রুতির কারণেই মার্কিন নারীদের সমর্থন অনেকটা তার দিকে ঝুঁকে গেছে বলে মত বিশ্লেষকদের। পুরো যুক্তরাজ্যে এই অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্য আইন প্রণয়নের পক্ষে জোর দিচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে, ট্রাম্প এই বিষয়ে একক কোনো নীতিতে এগোতে পারেননি। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নিয়োগ দেওয়া তিনজন বিচারপতি ২০২২ সালে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার (‘রো বনাম ওয়েড’ রুলিং) বাতিল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

রোববার পেনসিলভেনিয়ায় ভাষণের শেষের দিকে ট্রাম্প দাবি করেন, ২০২০ সালে তার পরাজয় হয়েছিল জালিয়াতির কারণে। ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন যে, নির্বাচনের ফলাফল নির্বাচন রাতেই ঘোষণা করা উচিত। তবে, একাধিক রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চূড়ান্ত ফলাফল জানতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.