আজ: রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪ইং, ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার |

kidarkar

নেতা নয়, নীতির পরিবর্তনে লাভ হবে বাংলাদেশের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে। কে হবেন বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশটির প্রেসিডেন্ট? ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিস নাকি রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বাংলাদেশিরাও তাকিয়ে আছেন এই নির্বাচনের দিকে, বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে দেশটি। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এই নির্বাচনের প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে কে যাচ্ছেন, তা জানতে মার্কিন নির্বাচনের দিকে নজর রাখছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মানুষের মধ্যে প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের জন্য কমলা হ্যারিস ভালো হবে নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতিবিদ, বাণিজ্য বিশ্লেষক ও রপ্তানিকারকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ মনে করেন, সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের বৈদেশিক নীতি বা বাণিজ্য নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয় না। কেউ মনে করেন, রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য আরও অনেক কিছু দিতে পারেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় তিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য ভালো হবেন। যদি চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়, তাহলে অনেক মার্কিন পোশাক খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ড পোশাক পণ্যের সোর্সিং স্থানান্তর করার চেষ্টা করবেন। এটি অন্যান্য দেশ ও একটি বড় সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলেও চীনের জন্য বিদ্যমান মার্কিন শুল্ক অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’

আরেক ব্যবসায়ী নেতা ও বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের পরিবর্তনে পররাষ্ট্রনীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই আমাদের ব্যবসার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে, যা ব্যবসায়িক সম্পর্ক সম্প্রসারণের একটি হাতিয়ার হতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যিনিই নির্বাচিত হন, তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প যেহেতু তার নিজের দেশের প্রতি বেশি মনোযোগী, সেহেতু তিনি উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভালো হবেন না। তার নির্বাচনী প্রচারণার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, তিনি করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে দেবেন। এতে বাজেট ঘাটতি বাড়বে। ফলস্বরূপ, মার্কিন সরকারের অন্যান্য দেশের উন্নয়ন বাজেট এবং সাহায্য হ্রাস পেতে পারে।’

যদিও বলা হয়, চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ কর দিলে বাংলাদেশ লাভবান হবে কিন্তু তা হয়নি। বাইডেন প্রশাসন তার মেয়াদে চীনের প্রতি মার্কিন কর নীতি অব্যাহত রাখলেও বাংলাদেশের রপ্তানি খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি। আমি মনে করি যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নীতির পরিবর্তন।’

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মার্কিন বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে সরকারকে আরও আলোচনামুখী হতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য নীতি পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।’

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটেক্সা) তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানিতে ৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.