নেতিবাচক আলোচনা-পর্যালোচনাই পুজিবাজার উন্নয়নের অন্তরায়
বাংলাদেশের পুঁজিবাদের দীর্ঘ সময় যাবত অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরবর্তী খুব অল্প সময় বাজার গতিশীল থাকলেও তারপরে টানা অস্থিরতা চলমান আছে। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ও সমপর্যায়ে অর্থনীতির দেশ গুলির সাথে তুলনা করি আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। কেন আমরা পিছিয়ে এই প্রশ্ন করাটা খুবই যুক্তিসঙ্গত।
পৃথিবীর সকল দেশে গণমাধ্যম,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির ব্যবহার আছে। তারা তার সুফল ভোগ করে আর আমরা তার অপব্যবহার করি। আমরা শুধু সমস্যার কথা প্রচার করি, অন্যের সমালোচনা করি। যিনি যে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না তার সাক্ষাৎকার নিয়ে টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। এই প্রচারে যে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা মোটেও বিবেচনায় নেওয়া হয় না।
সম্প্রীতি একজন বিশেষজ্ঞ বললেন, সূচক ৩০০/৪০০ পয়েন্টের বেশি বৃদ্ধি পাওয়াটা ভয় পাই। অন্য একজন বিশেষজ্ঞ বললেন, বাজার সামান্য নিচে আছে তবে ৫ হাজার ইনডেক্স থাকলে বাজার ঠিক আছে। এই দুটি উদাহরণ গল্প কথা নয় তা খুঁজলে আপনারা পেয়ে যাবেন এবং আমাদের হাতে ভিডিও রেকর্ড আছে। আরওে একজন বিশেষজ্ঞ বললেন শেয়ার বাজারের কোন তথ্যউপাত্ত ঠিক নেই। বিশেষ করে সিডিবিএলের তথ্য, হিসাব গুলো ঠিক নেই। এগুলো সব ভুয়া হিসাব। kyc ঠিক নেই।
দুঃখের বিষয় হলো উনার অবস্থান থেকে তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই বলতে পারতেন যদি এমন তথ্য তার জানা থাকে। গণমাধ্যমে বলাটা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। সত্যিকার অর্থে তিনি যে বিষয়ে কথা বলার জন্য অনুষ্ঠানে এসেছেন সে সম্পর্কে তার ধারণা বা হোম ওয়ার্ক জিরো। কিন্তু আমরা যারা সঠিক তথ্য বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে জড়িত আছি তারা বিষয়গুলি জানি কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি কিভাবে নিবে!
অনেক আলোচক, বিশেষজ্ঞ, বাজার বিশ্লেষক এ ধরনের অনুমান নির্ভর কথা বলে থাকেন যা আমাদের শেয়ার বাজার তথা অর্থনীতির জন্য দুঃখজনক। তথ্য উপাত্ত সমৃদ্ধ গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে যা উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের অনেক আলোচকই অনুমানের উপর চালিয়ে দেন। আপনি যদি কোন বিষয়ের সমস্যা/ত্রুটি খুঁজে পান। তা নিয়ে সমালোচনা করতেই পারেন। এটা স্বাভাবিক কিন্তু আপনি যদি বিষয়টির সমাধান বা উন্নয়নের সুপারিশ করতে না পারেন তবে প্রতীয়মান হয় আপনি আসলে বিষয়টি না বুঝেই অনুমান নির্ভর মন্তব্য করেছেন। সুযোগের সাথে গা ভাসানো আমাদের বৈশিষ্ট্য।
গত ৫ই আগস্টের পর সর্বত্রই সংস্কার নামক একটি শব্দ মহামারীর মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলন করে বিএসইসির সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। কিন্তু আমরা আজও কোন কর্মকর্তার শাস্তি বা চাকরিচ্যুতি ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। তাহলে এই বক্তব্যটি কি বার্তা দিল পুঁজিবাজারে। তাছাড়া দাবি করলেন ডিএসসির নিরপেক্ষ পরিচালকদের পরিবর্তনের জন্য এবং তাও হলো। আরও দাবি জানান ট্রাক্সফোর্স ও তদন্ত কমিটি করার জন্য তাও হলো। কিন্তু বিএসইসি কোন আইনের আওতায় ট্রাক্সফোর্স গঠন করলেন এবং তার আইনগত বৈধতা কতটুকু তা আমার বোধগম্য নয়। আপনাদের সকলের বক্তব্য পূর্বের কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেইনি তাই বাজার বিশৃঙ্খল এবং উন্নয়ন হয়নি।
আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি আগস্টের ৫ তারিখের পরে মার্কেট টানা চার দিন অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পায়। যখন কমিশন নিয়োগ হয়নি। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দুই মাস প্রায় ১১০০ পয়েন্ট হ্রাস পায় তাহলে এই দায় কার! আরো অবাক হলাম কমিশন কয়েকটি গ্রুপের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন তালিকাভুক্তির বিষয়ে।বিষয়টি খুব খুবই হাস্যকর। কোন কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে টাকা নেওয়া লাভজনক মনে করলে তারা আসবে অন্যথায় আসবেন না। বিএসইসির দায়িত্ব কারো বাড়ি থেকে ডেকে এনে তালিকাভুক্ত করা নয়।তাদের দায়িত্ব, আইন বা পলিসি এমনভাবে তৈরি করা যাতে উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু এ কাজটি তাদের একার নয়! এটি সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে করতে হবে।
এবার একটু বিনিয়োগকারীদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করি। আমাদের দেশের আইপিও অনুমোদন দেয়া হয় discloser basis তাই এটার জন্য কমিশন বা অন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না, যদি না কোন তথ্যের গরিমিল বা বিভ্রাট না দেখানো যায়। কোম্পানির তথ্য যাচাই-বাছাই করা বিনিয়োগকারীদের দায়িত্ব। বিএসইসি অনুমোদন দিলেই বিনিয়োগ করতে হবে এ বিষয়টি এমন নয়। সারা পৃথিবীতেই তালিকাভুক্তির পরে কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন non performing হয়ে যেতে পারে বা হয়ে যায় এতে হতাশ হওয়া বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর দায় চাপানো যথাযথ নয়। নিজের সম্পদ বিনিয়োগে নিজেকে আরও সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঘ শিকারের মানসিকতা পরিবর্তন খুবই জরুরী।