আজ: সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ইং, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৮ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার |

kidarkar

হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ

শেয়ারবাজার ডেস্ক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-অগাস্টের ‘গণহত্যার’ মামলায় ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে ‘গণহত্যার’ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে এ আদালত।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সোমবার এ আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সোমবার আদালতকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জুলাই অগাস্টে নিপীড়নের পটভূমি পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষ করার জন্য দুই মাস সময় প্রয়োজন।

পরে ট্রাইব্যুনাল এক মাস সময় দিয়ে ১৭৬ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তাজুল ইসলাম তখন বলেন, এর মধ্যেই তারা তদন্ত শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

বাকি যে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ১৪ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শাহজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে সকালে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

আর সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় আরেক সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে এদিন আদালতে হাজির করা হয়নি।

প্রসিকিউশনের আবেদনে ওই ১৩ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অর্ধশতাধিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।

এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।

গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।

যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করেছে, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তার দুই ভাতিজা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ রয়েছেন।

পরোয়ানা জারি হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিরুদ্ধেও।

শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জাফর ইকবালের নামেও জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

এছাড়া সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের নাম রয়েছে ওই তালিকায়।

শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, “প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবই। জুলাই-অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.