আজ: সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ইং, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৮ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার |

kidarkar

শিরোনামঃ- ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সে ছাড় দেওয়ার ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে নেওয়া পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হলো ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সে ছাড়। এটি একটি নীতিগত পরিবর্তন যা পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং বাজার স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সের ধারণা, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এর প্রভাব এবং সাম্প্রতিক ছাড়ের ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হলো।

ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স (Capital Gains Tax) হলো সেই কর, যা কোনো সম্পদ যেমন- শেয়ার, জমি বা অন্য সম্পদ বিক্রয় থেকে অর্জিত লাভের উপর আরোপ করা হয়। এই কর সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত। স্বল্পমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স (Short-term), যা সম্পদ এক বছরের কম সময় ধরে রাখলে আরোপ করা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স (Long-term), যা সম্পদ এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখলে আরোপ করা হয়।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স করপোরেট বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি বিতর্কিত বিষয়। করপোরেট বিনিয়োগকারীদের উপর ১০-১৫% পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স আরোপ করা হতো। তবে, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য করের হার শূন্য ছিল। এই উচ্চ করের হার বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় বাধা ছিল এবং কর নীতির অনিশ্চয়তা বাজারে তারল্য সংকট সৃষ্টি করেছিলো, এর ফলে আঞ্চলিক বাজারগুলোর তুলনায় বাংলাদেশি পুঁজিবাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছিল।

২০২৪ সালে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে করপোরেট বিনিয়োগকারীদের উপর আরোপিত ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে। এই ছাড়ের পেছনে মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো- বাজারে তারল্য বাড়ানো, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা।

ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সে ছাড়ের ফলে বাজারে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে, কর কমানোর পর, বাজারে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE)-এর ২০২৪ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন আগের মাসের তুলনায় প্রায় ২০% বেড়েছে কারণ বিনিয়োগকারীরা করের বোঝা কম হওয়ায় বাজারে সক্রিয় হয়েছে এবং ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সে ছাড় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের বাজারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। FTSE Russell এবং MSCI-এর মূল্যায়ন অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান উন্নত হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে $৩১ মিলিয়ন বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ এসেছে, যা কর ছাড়ের আগে তুলনামূলক কম ছিল। গেইনস ট্যাক্সে ছাড়ের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীরা বাজারে অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কর হার কমানোর ফলে লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে যা “কর কম, লেনদেন বেশি” নীতির প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সে ছাড় বিনিয়োগকারীদের জন্য আশার আলো। এটি বাজারে তারল্য এবং আস্থা বাড়িয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সে ছাড়ের ফলে বাজারে যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হতে পারে, যদি বাজারের নীতিমালার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, আরও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা চালু করা হয় এবং বাজারে সুবিধাজনক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার শক্তিশালী ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.