আজ: বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ইং, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

আইপিও পদ্ধতির সংস্কার গুঞ্জনঃ লটারি নাকি ইক্যুয়াল ডিস্ট্রিবিউশন, কোনটি প্রকৃত বিনিয়োগকারীর জন্য অধিক কার্যকর?

শেয়ারবাজারনিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (IPO) বরাবরই বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে গুঞ্জন উঠেছে, বর্তমানে চালু থাকা ইক্যুয়াল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বাতিল করে পূর্বের লটারি পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়টি। এই পরিবর্তন পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করতে পারে। পূর্বের লটারি সিস্টেম এবং বর্তমান ইক্যুয়াল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের তুলনামূলক বিশ্লেষণ, এদের সুবিধা-অসুবিধা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

লটারি পদ্ধতির পূর্ব অভিজ্ঞতাঃ আইপিওতে লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে শেয়ার বণ্টনের মূলনীতি ছিল সকল আবেদনকারীর মধ্যে সমান সুযোগ তৈরি করা। এটি স্বল্প পুঁজির সাধারণ মানুষের জন্য বেশ জনপ্রিয় হলেও পদ্ধতিটির কিছু বড় অসুবিধা ছিল। যেমন- ফেক বিও সিন্ডিকেটের দাপট,  পুজিবাজার থেকে ফান্ড আউটফ্লো, ইসলামি দৃষ্টিকোণ, অর্থপ্রবাহে সংকট, ইত্যাদি। এই পদ্ধতিতে একদল মানুষ ফেক বিও (BO) একাউন্ট খুলে লটারির মাধ্যমে শেয়ার পাওয়ার জন্য আইপিও চলাকালীন পুজিবাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়তো এবং একাধিক বিও একাউন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি হতো, যা প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করত। এক্ষেত্রে, লটারিতে শেয়ার পাওয়ার পর, তা বিক্রি করে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার থেকে সরে যেত, ফলে বাজারে স্থিতিশীল বিনিয়োগ নিশ্চিত হতো না এবং লটারি পদ্ধতি আইপিওতে অংশগ্রহণের জন্য বিনিয়োগের পূর্বশর্ত না থাকায় বাজারে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ আর্থিক প্রবাহ তৈরি হতো না। এদিকে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম, আর ইসলাম ধর্মে লটারি পদ্ধতি হারাম বলে বিবেচিত। ফলে অনেক ধর্মপ্রাণ বিনিয়োগকারী এই প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতো, এমনকি পুঁজিবাজার থেকেই দূরে থাকতো।

বর্তমান পদ্ধতির অভিজ্ঞতাঃ ২০২০ সালে লটারি পদ্ধতি বাতিল করে ইক্যুয়াল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম চালু করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি যোগ্য আবেদনকারী নির্ধারিত পরিমাণ শেয়ার পেয়ে থাকেন। এর ফলে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে, যেমন- প্রকৃত বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ, সিন্ডিকেট নির্মূল, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও উৎসাহ, ইসলামি নীতির সাথে সামঞ্জস্যতা, ইত্যাদি। বর্তমান আইপিওতে অংশগ্রহণ ব্যবস্থায় আইপিও আবেদন করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের শর্ত থাকায়, শুধুমাত্র প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এর ফলে বাজারে বড় অংকের অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত হয় এবং তারল্য বৃদ্ধি পায়। নূন্যতম বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতার কারণে ফেক বিও একাউন্ট ব্যবহার কঠিন হয়ে গেছে, এতে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা বেড়েছে। ইক্যুয়াল ডিস্ট্রিবিউশন পদ্ধতিতে প্রত্যেক আবেদনকারী একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমান সংখ্যক শেয়ার নিশ্চিতভাবে পেয়ে থাকে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও উৎসাহ প্রদান করেছে। সেই সাথে, লটারির অনুপস্থিতি মুসলিম ও ধর্মভীরু বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

লটারি পুনঃপ্রবর্তনের ঝুঁকিঃ লটারি পদ্ধতি পুনরায় চালু হলে পুঁজিবাজারে কিছু বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যেমন- ফেক বিও একাউন্ট এবং সিন্ডিকেট গঠনের ঝুঁকি আবারও বেড়ে যাবে, নূন্যতম বিনিয়োগের শর্ত না থাকলে বাজারে তাৎক্ষণিক অর্থপ্রবাহ কমে যাবে যা তারল্য সংকট তৈরি করতে পারে, লটারির মাধ্যমে শেয়ার না পাওয়ার আশঙ্কায় অনেক প্রকৃত বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে, লটারি পদ্ধতিতে স্বল্পমেয়াদী মুনাফার জন্য আবেদনকারীরা উৎসাহিত হন যা বাজারে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা হ্রাস করে, মুসলিম ও ধর্মভীরু বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, ইত্যাদি।

আইপিও পদ্ধতির পরিবর্তন পুঁজিবাজারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। লটারি পদ্ধতির চেয়ে বর্তমান ইক্যুয়াল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বেশি কার্যকর, কারণ এটি বাজারে স্বচ্ছতা, স্থিতিশীলতা এবং তারল্য বৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে। লটারি পদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তন বাজারে সিন্ডিকেট তৈরির ঝুঁকি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বাড়াবে। তাই, বর্তমান পদ্ধতি ধরে রাখা এবং প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে বাজারকে আরও স্বচ্ছ এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ করা জরুরি। পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

সাইফুল ইসলাম পিপন

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক (শিক্ষানবিশ)

মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

ইমেইলঃ [email protected]

২ উত্তর “আইপিও পদ্ধতির সংস্কার গুঞ্জনঃ লটারি নাকি ইক্যুয়াল ডিস্ট্রিবিউশন, কোনটি প্রকৃত বিনিয়োগকারীর জন্য অধিক কার্যকর?”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.