আজ: সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫ইং, ২২শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার |

kidarkar

পাচারের টাকা ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বসবে সরকার: প্রেস উইং

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে এফবিআইসহ (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈঠক করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

রবিবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এতে উপস্থিত ছিলেন উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেন, ‘‘বিগত সরকারের আমলে চোখের সামনে লুটপাট হলেও অনেকেই সেগুলোর বৈধতা দিয়েছেন।’’

এদিকে, আজ দুপরে আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সোমবার (২ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। প্রতিবেদনটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের উন্নয়নের গল্পের ময়নাতদন্ত,’’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তে ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে লুটপাট চলেছে। লুটপাটতন্ত্র জারি হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের অনেকেই এটার বৈধতাও দিয়েছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।’’

শ্বেতপত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির চিত্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আতঙ্কিত হয়েছেন বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন এটা রক্ত হিম করার মতো অবস্থা। বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা এটা। দেশের অনেক গরিব মানুষের টাকা এরা লুটপাট করেছে।’’

লুটপাটকারী খুব বেশি নয় জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘সেখান রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলা, অলিগার্ক কিছু ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের যোগসাজশে এ টাকা পাচার হয়েছে।’’ যার বৈধতা অনেক সাংবাদিক দিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন শফিকুল আলম।

পাচার করা টাকা ফেরত আনা সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘টাকা যেভাবে হোক ফেরত আনার চেষ্টা করব। সেই অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে অনেকগুলো কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের সঙ্গে অনেক ধরনের বৈঠক হচ্ছে, কথা হবে। আমাদের পুরো ফোকাস থাকবে টাকাটা কীভাবে ফেরত আনা যায়। তবে টাকাতো চুরি করে নিয়ে গেছে সেটা আগে সন্ধান করতে হবে’’।

শফিকুল আলম বলেন, ‘‘যারা চুরি হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনা নিয়ে কাজ করে তাদের সঙ্গে কথা হবে। টাকা নেওয়া সহজ, কিন্তু ফেরত আনার বিষয়ে আইনি দিক দেখতে হয়, কোথায় টাকা চলে গেছে তা নিশ্চিত হতে হয়। এজন্য আন্তর্জাতিক বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে, পরামর্শ নিচ্ছি। কীভাবে টাকা ফেরত আনা যায়।’’

তিনি বলেন, ‘‘টাকা ফেরত আনা কষ্টসাধ্য কাজ। এটা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের একটা।’’

‘আমার বাসার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক’- আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘তিনি অনেক বীরত্বের সঙ্গে বলেছিলেন তার পিয়নও চারশ কোটি টাকা বানিয়েছে।’’

শ্বেতপত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান শফিকুল আলম।

শ্বেতপত্রে আরও কিছু নতুন তথ্য যোগ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অফিসিয়াল তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। না হলে সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানুষের টাকা কীভাবে লুটপাট হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে তার পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে।’’

দুর্নীতি দমন কমিশন খুব শিগগিরই মনোনয়ন পাবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘‘কমিশনের কমিশনারদের বাছাই করা হবে। কারা কারা চুরিতে জড়িত ছিলেন তা বের করতে তারা খুব দ্রুতই কাজ শুরু করবেন।’’

মেগা প্রকল্পে বড় দুর্নীতি হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুরো প্রকল্পটাই করা হয়েছে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর (সাবেক ভূমিমন্ত্রী) সংসদীয় এলাকায় যাওয়ার জন্য। সেখানে উনি সাড়ে চারশ কোটি টাকা দিয়ে প্রাসাদ করে রেখেছেন। কিন্তু যাবেটা কে? এখন মেনটেন্যান্স খরচ ওঠানো যাচ্ছে না। অথচ এ চুরিটা আমাদের চোখের সামনে হয়েছে। এটা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়েছে। বলতে গিয়ে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলেছেন। তখন কেউ যদি ভালো অর্থনীতিবিদ বা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বললে কর্ণফুলী টানেলের অর্থনৈতিক ভ্যালু জানতে পারতো।’’

দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে সরকার ধারাবাহিক বৈঠক করছে বলে জানান প্রেস সচিব। সাড়ে ২২ হাজার টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে সহায়তা দেওয়ায় মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘‘এতে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক মাস আগেও ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছিল। ওই টাকা ছাপানোর মূল্য উদ্দেশ্য ছিল এস আলমকে টাকা পাচারে সাহায্য করা।’’

সরকার কিছু ব্যাংককে সহায়তার জন্য টাকা ছাপিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ টাকাটা চৌবাচ্চার পানির মতো। একদিক দিয়ে আসছে, আরেকদিক দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারে যে টাকা আছে তা সমান থাকছে। এতে অতিরিক্ত টাকার জোগান হবে না। বিধি মেনেই হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার টাকা ছাপিয়েছিল এস আলমকে টাকা পাচারে সহায়তা করার জন্য, এটা দুর্বল ব্যাংককে সহায়তার জন্য। এতে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না।’’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.