আজ: শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ইং, ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার |

kidarkar

বেক্সিমকোর তিন কোম্পানিতে বিশেষ নীরিক্ষা চালাবে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে বহুল আলোচিত বেক্সিমকো গ্রুপের তিন কোম্পানি, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো), বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেডে বিশেষ নিরীক্ষা চালাবে বিএসইসি।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৯৩৫তম কমিশন সভায় আলোচিত তিন কোম্পানির উপর বিশেষ নীরিক্ষা (Special Audit) চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র অনুসারে,  বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড ও শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেডের বিগত ৫ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের উপর এই নীরিক্ষা পরিচালনা করা হবে।

উল্লেখ, বেক্সিমকো গ্রুপের এই তিন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বাজারে ব্যাপক কারসাজি করার অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানি তিনটির খোদ মালিক পক্ষ এই কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগে জানা যায়।

২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর শেয়ারবাজারে বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি শুরু হয়। কৃত্রিমভাবে বাজারে কোম্পানি তিনটির শেয়ারের দর বাড়ানোর লক্ষ্যে হিসাবকারসাজির মাধ্যমে এগুলোর মুনাফা বাড়িয়ে দেখানো হয়। পাশাপাশি কোম্পানি তিনটির মালিকপক্ষ বেনামে ও বিভিন্ন শ্যাডো কোম্পানির নামে বিপুল সংখ্যক শেয়ার কিনে বাজারে শেয়ারের কৃত্রিশ সংকট তৈরি করে। এভাবে শেয়ারের দাম আকাশচুম্বি হয়ে যাওয়ার পর কেনা শেয়ারের একটি বড় অংশ বিক্রি করে দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেডের নতুন প্রকল্প দেখিয়ে সুকুক নামের ইসলামী বন্ড ইস্যু করে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয় ৩ হাজার কোটি টাকা।

২০১৯ সাল পর্যন্ত বেক্সিমকোর মুনাফা ও ঘোষিত লভ্যাংশের হার ছিল একেবারেই নগন্য। কোম্পানির শেয়ারের দামও ছিল তলানীতে। পরবর্তী দুই বছর সব কিছুতেই বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। এ সময়ে কোম্পানিটি সুকুক নামের ইসলামী বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়। তারপর থেকে কোম্পানির পারফরম্যান্সে উল্টোমুখী ধারা চলতে থাকে।

দীর্ঘদিন মন্দায় থাকার পর ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চাঙ্গা হতে থাকে দেশের পুঁজিবাজার। এ সময়ে লেনদেন পরিমাণ ও সূচক বৃদ্ধিতে বেক্সিমকো লিমিটেডকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। ওই বছরের ২০ জুলাই  ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ১৩ টাকা। পরবর্তী এক মাসের মধ্যে এটি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণে (২৫.৬০ টাকা) উন্নীত হয়। আগস্ট মাস থেকে বেক্সিমকোর শেয়ারের দর বৃদ্ধির গতি আরও বেড়ে যায়। শেয়ারের দর বৃদ্ধির ধারার মধ্যেই ২০২১ সালের মার্চ মাসে জানা যায় কোম্পানিটি সুকুক ইস্যু করে পুঁজিবাজার থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। তার কিছুদিন আগেই কোম্পানিটি বেক্সিমকো হোল্ডিংস থেকে ৩৫ কোটি টাকায় বেক্সপাওয়ার নামে একটি কোম্পানির সাড়ে তিন কোটি শেয়ার কেনে। তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেডের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে বেক্সপাওয়ারের কাছে। সুকুকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থের বড় অংশ এই তিস্তা সোলার ও করতোয়া সোলারে বিনিয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়।

সুকুক ইস্যুর খবরে বেক্সিমকোর শেয়ার আরও তেজী হয়ে উঠে। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে ১৮৭ টাকায় উঠে। তবে সুকুক ইস্যুর পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের গতি উল্টোদিকে মোড় নেয়। শেয়ারের দর হারাতে থাকে কোম্পানিটি। পরবর্তীতে এটি ফ্লোরপ্রাইস ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায় আটকে থাকে। সর্বশেষ ঘোষিত বোনাস লভ্যাংশ সমন্বয়ের পর নতুন ফ্লোরপ্রাইস দাঁড়ায় ১১০ টাকা ১০ পয়সা। আজ মঙ্গলবার ডিএসইতে এই দামে বেক্সিমকোর মাত্র ১টি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

উল্লেখ, বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার হচ্ছেন পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের সবচেয়ে সুবিধাভোগী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বর্তমানে তিনি একাধিক হত্যা মামলার আসামী হিসেবে জেলে আটক আছেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.