শুভ জন্মদিন শাবনূর
বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক স্বর্ণালী নাম শাবনূর। বলা যায় এটা কেবল একটি নামই নয়, শাবনূর ঢালিউডে একটা যুগেরও প্রতীক। নায়িকা মানেই সৌন্দর্য, প্রতিভা, আর পর্দায় মায়াবি উপস্থিতি- এই ধারণার এক জীবন্ত উদাহরণ তিনি।
এই মহাতারকা তার অভিনয়গুণ, ব্যক্তিত্ব আর বিনোদন দুনিয়ায় অবদানের জন্য তিনি আজও অগণিত ভক্তের হৃদয়ে উজ্জ্বল। আজ তার জন্মদিন। ১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে সিনেমায় নিয়মিত নন তিনি। মাঝে কিছু সিনমো দিয়ে প্রত্যাবর্তনের আভাস দিলেও আপাতত আবার তিনি সব খবরের বাইরে।
তবে জন্মদিনে শাবনূর বরাবরের মতোই আছেন আলোচনায়। তাকে নিয়ে দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ আয়োজনের অংশ হিসেবে প্রচার করবে তার অভিনীত সিনেমা। নন্দিত নায়িকার জীবনের বিশেষ দিনটিতে চোখ রাখা যাক তার পুরো ক্যারিয়ারে-
নূপুর থেকে শাবনূর
শাবনূরের পারিবারিক নাম ছিল কাজী শারমিন নাহিদ নূপূর। নূপুর নামেই ডাকতো সবাই। তবে সিনেমায় এসে তিনি হয়ে যান শাবনূর। তার নামটি বদলে দেন চলচ্চিত্রজগতের বরেণ্য মানুষ এহতেশাম। তার অভিষেক হয় ১৯৯৩ সালে এহতেশামের পরিচালনায় ‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমার মাধ্যমে। যদিও ছবিটি বাণিজ্যিক সাফল্য পায়নি তবে তার অভিনয়ের সম্ভাবনা নজর কাড়ে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৪ সালে জহিরুল হকের ‘তোমাকেই চাই’ সিনেমায় সালমান শাহের বিপরীতে অভিনয় করে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেন। ছবিটি সুপারহিট হলে সালমান-শাবনূর জুটিও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ঢালিউডে।
শাবনূর একাধিক ঘরানার ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে বারবার নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। রোমান্টিক, পারিবারিক, হাস্যরসাত্মক থেকে শুরু করে আবেগঘন চরিত্র- সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অপরিহার্য। ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘নারীর মন’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘নিরন্তর’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ ছবিগুলো বৈচিত্রময় চরিত্রের সফল নায়িকা শাবনূরকে যুগে যুগে উজ্জ্বল করে রাখবে।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি হিসেবে ধরা হয় শাবনূর এবং সালমান শাহকে। তাদের রসায়ন এমন ছিল যে দর্শকের মনে হতো তারা যেন বাস্তবেও পরস্পরের জন্য জন্মেছেন। কয়েক দশক পেরিয়েও আজ যখন একসঙ্গে সালমান-শাবনূরের নাম উচ্চারিত হয় তখন সেখানে রোমান্টিক আমেজ নেমে আসে। একসঙ্গে তারা ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, এবং ‘সুজন সখী’-এর মতো কালজয়ী সিনেমা উপহার দিয়েছেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে শাবনূরের রোমান্টিকতার যে অধ্যায়, তা রিয়াজের সঙ্গে জুটি বাঁধার মাধ্যমে আরও পূর্ণতা পেয়েছিল। সালমানের সঙ্গে শাবনূরের জুটি যেমন প্রেম, আবেগ আর রহস্যের রং ছড়িয়েছে অন্যদিকে রিয়াজের সঙ্গে তার জুটি ছিল মিষ্টি প্রেম আর পারিবারিক গল্পের যুগল হিসেবে সেরা উদাহরণ। এই জুটির রসায়ন এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে তারা একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন। তাদের ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘নারীর মন’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ ছবিগুলো আজও দর্শককে আন্দোলিত করে।
শাবনূর তার ক্যারিয়ারে সালমান শাহ ও রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধে তুমুল সাফল্য পেয়েছেন। তবে তিনি ইন্ডাস্ট্রির আরও অনেক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেও হিট-সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন। সেই তালিকায় আছেন ওমর সানি, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, মান্না, শাকিল খান, আমিন খান, ফেরদৌস, শাকিব খানসহ আরও অনেকের সঙ্গে। বলা হয়ে থাকে অনেক নায়কের ক্যারিয়ার মজবুত হয়েছে শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেঁধে।
শাবনূরের প্রতিটি চরিত্রে গভীর মমত্ববোধ ছিল। তিনি কেবল অভিনয় করতেন না, চরিত্রের অনুভূতি ধারণ করতেন। এই নিবেদনই তাকে বাকিদের থেকে আলাদা করেছে। তিনি কঠোর পরিশ্রম করতে পারতেন বলেও আলোচনা করেন তার পরিচালক ও সহকর্মীরা। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকাকালীন প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘণ্টা শুটিং করতেন শাবনূর।
রহস্যময়ী
শাবনূর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মিডিয়ায় আলোচনায় শীর্ষে ছিলেন। তবে তিনি নিজেকে সবসময় গোপন রাখতে পছন্দ করতেন। তার ব্যক্তিগত জীবন, বিশেষ করে সম্পর্ক এবং পরিবার সম্পর্কে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সেসব নিয়ে হ্যাঁ বা না, কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাতেন না তিনি। খুব যত্ন করেই যেন নিজেকে অপ্রকাশিত রাখতেন। বা এই এই গোপনীয়তা ও নিরবতা থেকে রহস্যময়ী শাবনূরকে নিয়ে সবার কৌতুহল থাকুক, চর্চা চলুক হয়তো সেটাই চাইতেন তিনি। উপভোগও করতেন। প্রেম-বিয়ে ও ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়েই তাকে জড়িয়ে অনেক গুজব চাউর আছে ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু সেগুলোর তেমন মজবুত তথ্য নেই। আবার সেগুলোকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দেয়ার পক্ষেও তেমন শক্ত ভিত্তি পাওয়া যায় না। এই যে রহস্যময়তা, এটাই যেন শাবনূরকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে দর্শকের কাছে।
শাবনূর তার কাজের জন্য অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ‘দুই নয়নের আলো’ (২০০৫) সিনেমার জন্য। তবে শাবনূর সবসময় দাবি করেন, কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসাই তার জীবনের সেরা অর্জন।
পর্দার বাইরে শাবনূর সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ হিসেবে পরিচিত। ২০১২ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হন এবং পারিবারিক জীবন নিয়ে মনোযোগী হন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি প্রথম পুত্র সন্তানের মা হন। তার ছেলের নাম আইজান নিহান।
শুভ জন্মদিন, শাবনূর! আপনি বেঁচে থাকুন আমাদের স্মৃতিতে, অনুপ্রেরণায় এবং ভালবাসায়- দুষ্টুমিষ্টি প্রেমিকা-স্ত্রী-বোন-ভাবীর আদলে চিরসবুজ বাঙালি নারী হয়ে।