আজ: সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার |

kidarkar

শ্বেতপত্রে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে শাসনকার্য সংক্রান্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সামিট গ্রুপের প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি সরকারের শ্বেতপত্রের খসড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বৃহত্তম বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ কিছু ব্যাখ্যা দিচ্ছে। সামিট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মানের করপোরেট সুশাসন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সর্বদা স্বচ্ছতাকে স্বাগত জানায়।

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে খসড়া শ্বেতপত্রের সংস্করণ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে। ওই নথিতে বলা হয়েছ, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা, গ্যাস আমদানির ওপর মাত্রাধিক নির্ভরশীলতা এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদ উত্তোলনে অনীহা, সবমিলিয়ে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল (“এসপিআইএল”), সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান এবং সামিট কর্পোরেশন লিমিটেডের (“এসসিএল”) প্যারেন্ট কোম্পনি – যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে শীর্ষস্থানীয় বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগকারী। সামিট কর্পোরেশন লিমিটেড এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ সম্পর্কে শ্বেতপত্রে উল্লেখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সামিটের প্রতিক্রিয়াঃ

১) খসড়া শ্বেতপত্রে সামিট গ্রুপকে এমন একটি “বিশেষ বৃহৎ ব্যবসায়িকগোষ্ঠী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা “প্রকল্প আয়ের ওপর ছাড়” এবং “বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে উদ্ভূত আয়ের ওপর ছাড়” উপভোগ করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

উল্লেখিত ছাড়গুলো একটি বৃহত্তর নীতিগত উদ্যোগের অংশ যা দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল। মূলত ১৯৯৬ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি’ তৈরি করা হয়েছিল। এই আইনের ফলশ্রুতিতে প্রায় ১০৪টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন ধরনের ছাড় শুধুমাত্র সামিট গ্রুপকে একচেটিয়াভাবে দেওয়া হয়নি বরং দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ও জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই পদক্ষেপ ছিল সামগ্রিক একটি জ্বালানিখাতভিত্তিক কৌশল।”

২) শ্বেতপত্রের “Other Common Malpractice” সেকশনে অভিযোগ করা হয়েছে যে, চুক্তি স্বাক্ষরের পর সামিটের সঙ্গে শর্তাবলী পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং বিশেষভাবে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে যে সামিট মেঘনাঘাট ৩৩৫ ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্ল্যান্ট হেভি ফুয়েল অয়েল (“HFO”) থেকে হাই-স্পিড ডিজেল (“HSD”) জ্বালানিতে পরিবর্তন করেছে, তবে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা হিট রেট পরিবর্তন করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে সামিটের ব্যাখ্যা হলোঃ ওই সময় সরকারের জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) মূল চুক্তিতে উল্লেখিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় এবং এর পরিবর্তে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সাথে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে বিকল্প জ্বালানি (হাই-স্পিড ডিজেল) সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়।

“বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম চালু রাখা এবং প্রতিশ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য, সামিট মেঘনাট এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য ছিল, তবে মূল টেন্ডারের শর্তাবলী অনুযায়ী, জ্বালানি তেল (হেভি ফুয়েল অয়েল) গ্রহণের জন্য আমরা এখনও প্রস্তুত।”

সামিট করপোরেশনের অধীনে সামিট গ্রুপ মোট ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করে, যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২,২৫৫ মেগাওয়াট, দেশের ১৭.৩ কোটি মানুষের জন্য মোট বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার (ইনস্টলড) প্রায় ১৭%।

৪) শ্বেতপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ অয়েল, গ্যাস অ্যান্ড মিনারেল কর্পোরেশনের (“পেট্রোবাংলা”) অধীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও সামিট গ্রুপ যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (“এফএসআরইউ”) পরিচালনা করে, চড়া দামে এলএনজি সরবরাহ করছে। ফলে সরকারি অর্থের অপব্যবহার হচ্ছে।

অথচ, সামিটের এফএসআরইউ কখনই গ্যাস সরবরাহে দায়িত্বে ছিল না; সুতরাং সামিট এখন পর্যন্ত গ্যাস আমদানি বা সরবরাহ করেনি। সেই সময়ের অন্যান্য সব চুক্তি যেমন ওমানের ওকিউ ট্রেডিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির তুলনায় সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড এবং পেট্রোবাংলার মধ্যে স্বাক্ষরিত দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস সরবরাহ চুক্তিটি ছিল সর্বনিম্ন মূল্যের। আমরা আবারো বলতে চাই, সামিট আজকের দিন পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী (গ্যাস) সরবরাহ চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে কোনো গ্যাস আমদানি করেনি।

এ ছাড়া, সামিট এফএসআরইউ পরিচালনায় কোনো বিশেষ ছাড় সুবিধা পায়নি। উপরন্তু সামিটের দৈনিক ট্যারিফ/চার্টার রেট মহেশখালীতে অবস্থিত এক্সিলারেট এনার্জির মালিকানাধীন ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের তুলনায় কম। বাংলাদেশের দুটি এফএসআরইউ এর মধ্যে, এক্সিলারেট এনার্জির এফএসআরইউ-টি হলো প্রথম। উল্লেখিত প্রণোদনাগুলো সামগ্রিক (এফএসআরইউ) শিল্পখাতের জন্য নির্ধারিত ছিল, যা এক্সিলারেট এবং সামিট, উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।

“একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামিট গ্রুপ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি সফল ট্র্যাক রেকর্ড রেখেছে। সামিট গ্রুপ বাংলাদেশে (সামিট করপোরেশন) ও সিঙ্গাপুরে (সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল), সর্বদা উভয় দেশের আইনকে সম্মান এবং অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে।”

সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, “আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রম সবসময় দেশের আইন অনুসরণ করেছে। আমরা সততা এবং করপোরেট সুশাসনের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে পেরে গর্বিত।”

সামিট আরও বলছে, “জাতি গঠনের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে, আমরা আমাদের সব অংশীদারদের সাথে সংলাপের জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা শ্বেতপত্র প্রণনয়নকারী কমিটির সম্মানিত সদস্যদের যেকোনো প্রয়োজনে সংশোধনী বা ব্যাখ্যা জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগকারী হিসেবে, সামিট গ্রুপ সবসময় তার কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করে চলেছে এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড সম্পর্কেঃ সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (এসপিআইএল) বাংলাদেশের বৃহত্তম স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি), যা দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতের মোট ইনস্টলড ক্যাপাসিটির ১৭% ও দেশের মোট ইনস্টলড ক্যাপাসিটির ৭% সরবরাহ করে। সামিট মোট ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ)-এর মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্বে আছে, যা দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পুনরায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তরিত করতে সক্ষম।

এসপিআইএল একটি সিঙ্গাপুর নিবন্ধিত বেসরকারি কোম্পানি, যেখানে জনাব মুহাম্মদ আজিজ খানের পরিবারের ৭৮% মালিকানা আছে। ২০১৬ সালে এসপিআইএল বাংলাদেশে নিবন্ধিত সামিট করপোরেশন লিমিটেড (এসসিএল) অধিগ্রহণ করে, যা বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাত বিষয়ক শাখা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) দ্বারা আর্থিকভাবে সমর্থিত ছিল। সামিট করপোরেশন বাংলাদেশে বিভিন্ন অবকাঠামো সম্পদের মালিকানা আছে। ২০১৯ সালে জাপানের বৃহত্তম পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি জেরা, এসপিআইএল-এর ২২% অংশীদারিত্ব গ্রহণ করে এবং বর্তমানে এটি এসপিএল-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.