আজ: শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ফের অস্থির ডলার বাজার, কাটছেই না সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ডিসেম্বরে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। রপ্তানি আয়ও আসছে বেশি পরিমাণে। এর পরও দেশের ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে অধিকাংশ ব্যাংক। পাশাপাশি খোলা বাজারেও (কার্ব মার্কেটে) ডলারের দাম বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর চার মাস ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও গত ১৫ দিনে তা আবার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোকে ১২৩ টাকার বেশি দরে রেমিট্যান্সের ডলার না কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতেও ৩ টাকা দর বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেননা এতদিন ঘোষিত দর অনুযায়ী প্রতি ডলারের বিনিময় হার সর্বোচ্চ হওয়ার কথা ছিল ১২০ টাকা। সেই সঙ্গে বেশি দরে ডলার কেনা ১৩টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী তৎপরতার কথা বললেও ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না করলে স্থিতিশীল হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, মূলত দুটি কারণে ডলারের দর বাড়ছে। প্রথমত, বাস্তবতার কারণে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, দর বাজারভিত্তিক করা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তহীনতা।

জানা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্য আমদানির গতি বেড়েছে, এতে আমদানি দায় পরিশোধের চাহিদাও বেড়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওভারডিউ (বকেয়া) হয়ে যাওয়া সব ঋণপত্রের (এলসি) দায় ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কিছু ব্যাংক বেশি দামে ডলার কিনে হলেও এলসির দায় সমন্বয় করছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএফএফ) শর্ত অনুযায়ী বছরের শেষে নির্ধারিত পরিমাণে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে যে দলটি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছে, তারা লিখিত বক্তব্যে বলেছে, বাংলাদেশকে তারা নতুন করে ঋণ দিতে চায়। তবে ডলারের দরকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করাসহ বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে। এর উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকও বলেছে ডলারের দরকে বাজারভিত্তিক করা হবে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে বা কীভাবে করা হবে, সেই নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো দেয়নি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের অভাবেই কিছু ব্যাংক আগে থেকেই ডলারের দর বাড়িয়ে দেয়।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের চাহিদা বেড়েছে, এটা সত্য। তবে চাহিদা বাড়া ছাড়াও ডলারের দর বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অতীতের ভুল নীতির ফল। আগের সরকারের সময়ে ডলারের দরকে বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে ধরে রাখা হয়েছিল। এ কারণে দেশের রিজার্ভের ক্ষয় হয়েছে, টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন ঘটেছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ভুল নীতির কারণে দেশের মানুষ ও অর্থনীতি বিপদে পড়েছে। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করে বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে সাময়িকভাবে দর বাড়ত। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসত এবং দর সংশোধন হতো।’

তিনি বলেন, ‘দর বাজারভিত্তিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো আগের নীতিতেই রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো আগের নিয়মেই অর্থাৎ ক্রলিং পেগের মাধ্যমেই ডলারের দর নির্ধারণ করা হচ্ছে। যদিও আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর নির্ধারণ বাজারভিত্তিক করার কথা বলেছে। কিন্তু সেটা এখনো করেনি। ফলে এই সুযোগে কিছু ব্যাংক ধরেই নিয়েছে এতে ডলারের দর বাড়বে। তাই তারা আগে থেকেই বাড়তি দরে ডলার কেনা শুরু করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংককে এখন অতীতের বকেয়া এলসি দায়সহ অন্যান্য দায়ও পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলা বাড়ছে। এ কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। তবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির কারণে ডলারের জোগানও বেড়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ২-৩ বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা পাওয়া যাবে। এসব ডলার যোগ হলে সংকট অনেকাংশেই কেটে যাবে। এ জন্য ক্রলিং পেগ নীতি থেকে বেরিয়ে ডলারকে অতিসত্বর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া দরকার।’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে এখন ডলারের চাহিদা বেশ বেড়েছে। ফলে অনেক ব্যাংক বাড়তি প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওভারডিউ হয়ে যাওয়া সব ঋণপত্রের (এলসি) দায় ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কিছু ব্যাংক বেশি দামে ডলার কিনে হলেও এলসি দায় সমন্বয় করছে। এর পাশাপাশি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় নভেম্বর-ডিসেম্বরে জ্বালানি তেল- এলএনজিসহ বেশ কিছু পণের বড় এলসি খোলা হয়েছে। আবার আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলাও বেড়েছে। এসব কারণে ডলারের দর এখন ঊর্ধ্বমুখী।’

১ টি মতামত “ফের অস্থির ডলার বাজার, কাটছেই না সংকট”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.