আজ: রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫ইং, ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ জানুয়ারী ২০২৫, রবিবার |

kidarkar

এক ডজনের বেশি ব্যাংককে ঝুঁকিতে ফেলেছে দুই গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী বেক্সিমকো ও এস আলম গ্রুপ শীর্ষ খেলাপির তকমা নিয়ে এখন বহুল আলোচিত-সমালোচিত। এই দুই গ্রুপের কারণে অন্তত এক ডজন ঋণদাতা ব্যাংক সংকটে পড়েছে, যা ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির তালিকায় দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো ২৩ হাজার ১২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে তালিকার শীর্ষে ছিল। অন্যদিকে, এস আলম গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ি, শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫১ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেক্সিমকো ও এস আলমের মধ্যে সম্মিলিতভাবে ৩৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে, যা ব্যাংক খাতের মোট খেলাপির ১২ শতাংশের বেশি।

এই দুই গ্রুপকে অর্থায়নকারী অন্তত ২০টি ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকাররা জানান, বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাগারে এবং এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বিদেশে অবস্থান করছেন, ফলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না।

ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে বেক্সিমকো ও এস আলমের মোট ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৫.১৭ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে একটি স্ট্রেস টেস্টে দেখা গেছে, শীর্ষ তিন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার ফলে খেলাপি ঋণও বাড়বে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেক্সিমকো মোট ১৬টি ব্যাংক ও সাতটি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, যার মধ্যে আট ব্যাংকের কাছে ২৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

বেক্সিমকোর খেলাপির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে জনতা ও সোনালী ব্যাংক। অন্যদিকে, এস আলমের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা এবং তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে, এস আলম নিজ নিয়ন্ত্রণে থাকা চারটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ৯৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা পাচার করেছে। এসব তথ্য থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের মাধ্যমে এসব পরিচালনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের একজন পরিচালক জানিয়েছেন, সাইফুল আলমের ঋণের পরিমাণ অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা। তিনি ১০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তার নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না।

সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মুসলিম চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে তারা খেলাপি ঋণে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে, তবে ৫ আগস্টের পর বেক্সিমকো ঋণ না পরিশোধ করায় খেলাপিতে চলে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, বড় বড় গ্রুপ ব্যাংক থেকে বৈধভাবে ঋণ বের করে নিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের সম্পদের পরিমান খুবই কম। সরকারের উচিত তাদের বিদেশে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের জবাবদিহিতা না থাকার ফলে এ ধরনের দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং এর জন্য সংশ্লিষ্টদের বিচার করা প্রয়োজন।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.