আজ: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ইং, ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

সয়াবিনের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা, নতুন প্রস্তাব ট্যারিফ কমিশনে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্যের সব যুক্তি যেন বাংলাদেশে এসে হার মানে। যেমন ধরুন, ভোজ্যতেল। গেল অক্টোবর আর নভেম্বরে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম দুই দফা বাড়ে। বুকিং রেট দাড়ায় ১১শ ৪৫ ডলারে। ডিসেম্বরে সেই দাম আবারও কমে ১ হাজার ৬৪ ডলার হয়। দেশের বাজারে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে দুই দফা শুল্ক কমায় সরকার। তারপরও ডিসেম্বরে দেশে সয়াবিন তেলের দাম না কমে, উল্টো বেড়েছে।

এরপর কিছুদিন সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। ইদানিং তা আবার কমেছে। রাজধানীর টাউনহল বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের চিরচেনা কার্টনের স্তুপ নেই। বরং রাইস ব্র্যান আর সানফ্লাওয়ার তেলের দাপট। ডিলারের থেকে পণ্য আসছে অংকের হিসাব কষে। যেমন, এক কোম্পানির ৫ লিটারের বোতল মিললে, আরেক প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে শুধুই ১-২ লিটারের প্যাকেজ।

এরই মধ্যে জানা গেছে, ডিসেম্বরে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েও খুশি নন উৎপাদকরা। আবারও দর সমন্বয় করতে চান তারা। সে জন্য নতুন প্রস্তাব গিয়েছে ট্যারিফ কমিশনে। তবে সিদ্ধান্ত আসার আগেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমে গেছে। সীমিত করা হয়েছে মিলগেটের কার্যক্রম। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সয়াবিন তেলের সাথে পোলাওয়ের চাল কিনতে বাধ্য করছে একাধিক কোম্পানি।

খুচরা এক ব্যবসায়ী বলেন, ক্রেতাদের তেল ও পোলাওয়ের প্যাকেজ নিতে বললে তারা নেন না। কিন্তু আমরাও তো শুধু তেল বিক্রি করতে পারছি না। এভাবেই আমাদেরও কিনতে হয়েছে।

আরেক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, তেলের যোগান কিছুটা কমেছে। এই দামেই অনেকে কিনতে গিয়ে হিমশিম খান। তারা খোলা তেল দিয়েই কাজ সারেন।

পাইকারি ভোজ্যতেল বেচাকেনায় সবসময় সরগরম থাকে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার। সেখানে গিয়ে মানুষের বিশাল জটলা দেখা যায়। তাদের সেই জটলা সয়াবিন তেলের ডেলিভারি অর্ডার বা ডিও কিনতে। সেই স্লিপ মিল গেটে দেখালেই মিলে সয়াবিন তেলের চালান। ইদানিং সেই যোগান কমেছে।

সেখানে তেল কিনতে যাওয়া এক ব্যবসায়ী বলেন, কোনো মিলই সঠিকভাবে মাল দিচ্ছে না। তারা দিচ্ছে না বলেই বাজারের এই অবস্থা। আমাদের কোনো বেচাকেনা নেই।

ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর অভিযোগ মিল মালিকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। একই চাপে পড়ে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৯ ডিসেম্বর মিল মালিকদের সাথে বৈঠকের পর সয়াবিন তেলের দর লিটারে ৮ টাকা বাড়াতে সম্মত হয় সবপক্ষ। তারপরও বাজারে যোগান স্বাভাবিক না হওয়া, নতুন খবর দিচ্ছে। গত ৬ জানুয়ারি ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে ট্যারিফ কমিশনে নতুন প্রস্তাব পাঠিয়েছে মিল মালিকদের সংগঠন।

এ বিষয়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ডলারের যে রেট তাতে আমাদের পোষাচ্ছে না। সেজন্য দাবি-দাওয়া বাড়ালে সুবিধা হয়। এ বিবেচনা ট্যারিফ কমিশন, আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই-বাছাই করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও মিল মালিক অ্যাসোসিয়েশন বসে একটি রেট নির্দিষ্ট করবে।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মো: বশির উদ্দিন বলেন, সরকার শুল্ক কমিয়েছে, এতে কেজিপ্রতি দাম ১০-১২ টাকা কমার কথা। কিন্তু কমেনি। যদি বাড়ায়, তাহলে আরও ১০-১২ টাকা দাম বাড়বে। বাড়ালে-কমালে লাভবান তারাই হচ্ছে। ভোক্তা বা আমরা হচ্ছি না।

এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি উৎপাদক কোম্পানি বা তাদের প্রতিনিধিরা। তবে জানিয়েছে, সাত দিনের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.