আজ: শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ইং, ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

শেখ হাসিনার আমলের প্রবৃদ্ধির পুরোটাই ভুয়া: রয়টার্সকে ড. ইউনূস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে দেশের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছিল, তা ‘ভুয়া’। এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন না তোলার জন্য পুরো বিশ্বকে দায়ী করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস।

ছাত্র-জনতার কয়েক সপ্তাহের আন্দোলনের মুখে গত আগস্টে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তারপর দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেন ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রয়টার্স বলেছে, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের অর্থনীতি ও বিশাল গার্মেন্টস শিল্পকে ঘুরে দাঁড় করানোর কৃতিত্ব দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। যদিও সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে দমন করার অভিযোগ করেছেন।

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, হত্যা, দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য তাকে হস্তান্তরে দিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।

তবে শেখ হাসিনা ও তার দল কোনও ধরনের ভুল করার কথা অস্বীকার করেছে। এছাড়া নয়াদিল্লি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

সুইজারল্যান্ডের আলপাইন রিসোর্টে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘‘তিনি (শেখ হাসিনা) দাভোসে সবাইকে বলছিলেন কীভাবে একটি দেশ চালাতে হয়। কিন্তু কেউই সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। এটি মোটেও ভালো বিশ্ব ব্যবস্থা নয়।’’

তিনি বলেন, ‘‘এর জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী। যে কারণে বিশ্বের জন্য একটি ভালো শিক্ষা এটি।’’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। এটা একেবারে ভুয়া প্রবৃদ্ধির হার।’’

কেন তিনি এই প্রবৃদ্ধির হারকে ভুয়া বলে মনে করেন সে বিষয়ে রয়টার্সকে বিস্তারিত কিছু বলেননি ড. ইউনূস। তবে ব্যাপক-ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির গুরুত্ব ও সম্পদের বৈষম্য কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

১৭ কোটি মানুষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছায়। করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের আগে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার সময় এই হার ছিল প্রায় ৫ শতাংশ।

২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসাবে তকমা দিয়েছিল। ওই সময় বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর ২০১৫ সালে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

• ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন মর্মাহত ইউনূস

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ থেকে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সৃষ্টি হয়; যা গত জুলাইয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় ছাত্র-জনতা আন্দোলন সহিংস উপায়ে দমন ঘিরে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। যদিও শেখ হাসিনার সরকার ছাত্রদের আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আন্দোলনকারীরা নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বেছে নেন। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের এই প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছরের শেষের দিকে অথবা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন।

‘‘দরিদ্র্যদের ব্যাংকার’’ হিসাবে পরিচিত ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল জিতেছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে খুব বেশি চালিত না। আমি একেবারে নিম্ন স্তরের মানুষের জীবনযাত্রার মানে চালিত। তাই আমি এমন এক অর্থনীতি আনতে চাই; যা সম্পদ কেন্দ্রীকরণের সম্পূর্ণ ধারণাকে এড়িয়ে যায়।’’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দৃঢ় বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং তিনি নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে এই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন ড. ইউনূস। আন্দোলনকারী ও রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং নিজের মেয়াদকালে হাসিনা যেসব অপরাধ করেছেন সেজন্য শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চান তিনি।

এই কঠিন সময়ে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেছেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে টানাপড়েনের সম্পর্ক ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না। বাংলাদেশের স্থল সীমানার প্রায় পুরোটাই ভারতের সাথে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.