ঋণের ভারে দিশেহারা ফাস ফাইন্যান্স, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের লিজিং কোম্পানিগুলোর আর্থিক সংকট নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম শিকার হয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস। চরম আর্থিক সংকটে থাকা এই কোম্পানির ঋণ এখন তার মোট সম্পদের তুলনায় অনেক বেশি, যা অস্তিত্ব সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
আকাশচুম্বী লোকসান, তলানিতে শেয়ার মূল্য
২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফাস ফাইন্যান্সের মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১,৫৮০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট সম্পদের তুলনায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১,৩৯৭ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা মারাত্মক সংকেত দিচ্ছে।
অবস্থা এতটাই নাজুক যে, কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (NAVPS) এখন ঋণাত্মক ১০৫.৪২ টাকা। এর অর্থ, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা কোনো অর্থ ফেরত পাবেন না। এছাড়া, ২০২৩ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৯.৩৭ টাকা, আর ওই বছর মোট নিট লোকসান হয়েছে ২৮৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
ফাস ফাইন্যান্স ২০১৯ সাল থেকেই টানা লোকসানের মুখে। গত পাঁচ বছরে (২০১৯-২০২৩) প্রতিষ্ঠানটির মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১,৬৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে।
নগদ প্রবাহের তীব্র সংকট
কোম্পানির পরিচালন নগদ প্রবাহও ঋণাত্মক ১৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যার অর্থ হলো প্রতিদিনের ব্যয় চালানোর মতো পর্যাপ্ত নগদ অর্থও নেই। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।
শেয়ার দরে পতন অব্যাহত
একসময় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা ফাস ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এখন রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। ২০২৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির শেয়ারমূল্য নেমে এসেছে মাত্র ৩.৪০ টাকায়। এক বছর আগেও এই দর তুলনামূলক ভালো ছিল, কিন্তু আর্থিক সংকটের প্রভাব শেয়ারবাজারেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
অবসায়নের শঙ্কায়
নিরীক্ষকদের মতে, যদি ফাস ফাইন্যান্স দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে এটি অবসায়নের পথে চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
ফাস ফাইন্যান্সের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ এবং কোম্পানির আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়। যদি যথাযথ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকেই একসময় হারিয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগের মধ্যে আছেন, কারণ ফাস ফাইন্যান্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। প্রতিষ্ঠানটি এখন কঠিন সিদ্ধান্ত না নিলে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।